নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদদাতা ) : এশিয়া কাপ ক্রিকেটে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী নজির স্থাপন করেছেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক হাতে ব্যাট করেন তিনি। এদিন তিনি ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাতে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে তার হাতে ব্যান্ডেজ পরিয়ে দেয়া হয়। তার পরও তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দিতে মাঠে নেমে যান।
ক্রিকেটে এর আগেও দলের প্রয়োজনে এমন এক হাতে ব্যাট করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাছাড়া দলের প্রয়োজনে ভাঙা চোয়াল, ভাঙা পা নিয়েও ব্যাটিংয়ে নামার ইতিহাস রয়েছে। ক্রিকেটে এমন ব্যতিক্রমধর্মী কিছু ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিই।
তামিম ইকবাল ( বাংলাদেশ ) :
দুবাইয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে পুল করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যাটে বলে হয়নি। বল লাগে তার হাতে। হাতে ব্যথা পাওয়ায় আর কোনো বল না খেলে তিনি মাঠ ছেড়ে যান। বাংলাদেশ ইনিংসের ৪৬.৫ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান রান আউট হন। এটি ছিল বাংলাদেশের নবম উইকেটের পতন। ২২৯ রানে শেষ হতে পারতো বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু তামিম ইকবালের দু-সাহসিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয় ২৬১।
মুশফিকুর রহিম ( বাংলাদেশ ):
গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁজরে ব্যাথা নিয়ে খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। এ কারণে তিনি পরে ফিল্ডিং করতে নামতে পারেননি। ম্যাচটিতে তিনি বিপদের সময় দলের হাল ধরেন। সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে তিনি দলকে ভালো একটি সংগ্রহ এনে দেন। ১৪৪ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হয়ে যান তিনি। ম্যাচে তামিম ইকবাল ইনজুরিতে আক্রান্ত হাত নিয়ে মাঠে নামার পর তিনি তামিমকে মোটেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেননি। নিজেই স্ট্রাইকে ছিলেন। তিনি সর্বশেষ যে ১৫টি বল খেলেন তার মধ্যে তিনি তিনটি চার মারেন ও চারটি ছক্কা হাঁকান।
ম্যালকম মার্শাল ( ওয়েস্ট ইন্ডিজ ):
১৯৮৪ সালে হিডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ম্যালকম মার্শাল তার বাঁ-হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ব্যথা পেয়েছিলেন। চিকিৎসক তাকে সিরিজের বাকি অংশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়। তাকে দশদিন পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে বলেছিলেন। ম্যাচের তৃতীয় দিন ল্যারি গোমেজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করেছিল ২৭০ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাতে এই স্কোর ছাড়িয়ে যেতে পারে সেই চেষ্টাই করছিলেন ল্যারি গোমেজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন নবম উইকেটের পতন ঘটে তখন ল্যারি গোমেজের ব্যক্তিগত ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরপর ল্যারি গোমেজকে সঙ্গ দিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ম্যালকম মার্শাল।
গ্রায়েম স্মিথ ( দক্ষিণ আফ্রিকা ) :
২০০৯ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে মিচেল জনসনের একটি ডেলিভারি মোকাবেলা করার সময় বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথের। এই ম্যাচের শেষ দিন হার এড়ানোর জন্য ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দলের হার এড়াতে পারেননি।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা ( শ্রীলঙ্কা ) :
একবার পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিসের একটি রাইজিং ডেলিভারি খেলতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে। তখন শ্রীলঙ্কার জিততে ৭০ রানের বেশি প্রয়োজন ছিল। এসময় লঙ্কানদের ভরসা ছিল টেলএন্ডাররা। শ্রীলঙ্কার যখন আট উইকেট পড়ে যায় তখন আবারও মাঠে নামেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা এবং শ্রীলঙ্কাকে দুই উইকেটে জয় এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন।
রিক মকস্টার ( অস্ট্রেলিয়া ) :
১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার রিক মকস্টার ভাঙা চোয়াল নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। তিনি ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন দশ নম্বর পজিশনে। রড মার্শের সঙ্গে তিনি ৫৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। ম্যাচটিতে ৪৫ রানে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে ২৬১ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নেমে ৩৫.২ ওভারে ১২৪ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয়। ফলে ১৩৭ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।