টাকার বান্ডেলে ডিবি এসআই আরিফের ঘুম !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : সপ্নে নয় বাস্তবে টাকার বান্ডেলের উপর ঘুমিয়ে পড়লেন নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ। যেখানে রয়েছে ১শত থেকে শুরু করে হাজার টাকার নোটের বেশ কয়েকটি বান্ডেল। আর এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়ে এখন ভাইরাল। যা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে এ টাকার বৈধতা নিয়েও।

তবে এ বিষয়ে ৬ নভেম্বর বুধবার রাতে মুঠোফোনে নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ডট কম এর প্রতিবেদককে এসআই আরিফের সাথে কথা হলে তিনি দাবী করেন, ওই ছবিটা সম্প্রতি তোলা নয়। কয়েক মাস আগের, সে সময় তার মা অসুস্থ ছিলেন। ওই ছবিতে হাতে পড়নে যে সকল আংটি দেখা যাচ্ছে, সেগুলোও এখন আর তিনি পড়েন না। মূলত মায়ের চিকিৎসার জন্যই ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি একজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। তিনি নিজেও সেদিন অসুস্থ এবং চিন্তিত ছিলেন। ওই সময় গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও এর আশে পাশে এলাকায় ডিউটি করেন এসআই আরিফসহ এক দল পুলিশ। ৬ নভেম্বর বুধবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জে তাদের ব্যবহারের একটি গাড়ি রাস্তার পাশে পার্কিং করা ছিল। ওই সময় একাধিক ব্যক্তি গাড়ির ভেতরের কয়েকটি ছবি তোলেন। এতে দেখা যায় এসআই আরিফ বিপুল পরিমাণ টাকার উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। তবে টাকার মোট অংক জানা যায়নি। পাশে ছিল তার ব্যবহৃত সরকারি ওয়ালেস। তবে এ ব্যাপারে জানতে এসআই আরিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে কেউ হয়তো তুলেছে, যা পরনো।

এদিকে সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ঘটনায় ইতোপূর্বে বেশ সমালোচনায় চলে এসেছেন তিনি। একজন সামারিবাজ  পুলিশ অফিসার হিসেবেও পেয়েছেন ব্যপক পরিচিতি। তিনি কাউকে আটক করলে একদিন দুই দিন আটকে রেখে প্রথমে সামারি করার চেষ্টা তদবির করেন। পরে ব্যাটে বলে না মিললে ২৪ ঘণ্টা আগের একটি তারিখ দেখিয়ে একটি মামলার মাধ্যমে চালান দেন আটক ব্যক্তিকে।

এমন বেশ কয়েকটি তথ্য তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে, সম্প্রতি গত ১৯ অক্টোবর শনিবার দিবাগত রাতে সেখান থেকে তিনি মেহেদী নামের একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। পরে তাকে ছাড়তে রাত ও পরের দিন পর্যন্ত চলে দেন দরবার। আরিফ মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়বেন তবে, এর জন্য তিনি হেঁকেছিলেন ৫ লাখ টাকা। পরবর্তী দর কষাকষিতে না মেলাতে গত ২১ অক্টোবর ১শ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যদিও ওই সময় আরিফ দাবি করেছিলেন, তিনি মেহেদীকে ১৯ তারিখে নয়, ২০ অক্টোবর ধরেছিলেন। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে তার দেওয়া তথ্য মতো আরও তিন জনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু মামলায় তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও গত ২৫ অক্টোবর রাতে শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে জাবেদ বেপরীসহ দুই জনকে আটক করেন এসআই আরিফ। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা এবং ২শ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখানো হয়। একই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকার নাছির উদ্দিনের ছেলে সালমান আহম্মেদকে। যাকে ধর্মগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছিলো। কিন্তু দরকষাকষিতে না মেলাতে এই মামলায় চালান করা হয় এবং মামলায় উল্লেখ করা হয়, আটক জাবেদ বেপারী সালমানের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে থাকে।

এদিকে সূত্র জানায়, জাবেদ বেপারীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকগুলো অন্য কারোটা দিয়ে দেখানো হয়েছে। পুরো রাত ভর তাকে মারধর করা হয়েছে। ২০ লক্ষ টাকা না দেয়া হলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকী দিয়েছে আরিফ। পরবর্তীতে ১৫লক্ষ টাকার লেনদেন করে তাকে মাদক মামলা দিয়ে চালান করা হয়। তবে সেখানে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা থেকে কমিয়ে সল্প কিছু উদ্ধার দেথানো হয়েছে।

আরো জানা গেছে, এসআই আরিফ গত মাসের শুরুতে ফতুল্লার ইউনাইটেড ক্লাবে গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে এক শিল্পপতিসহ সাত জনকে আটক করেন। সেখানে জুয়ার সরঞ্জামসহ বিপুল টাকা উদ্ধার হয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের পর ওই সাত জনকে সাধারণ ধারায় আটক দেখিয়ে পরদিন বিকালে আদালতে পাঠান। অভিযুক্ত সাত জন এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

add-content

আরও খবর

পঠিত