নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রির্পোট ) : বাংলাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্বে এখন প্রশংসিত। জাতিসংঘ শান্তিমিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন ব্রান্ড নেম। দেশের উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীকে তিনি দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকতেও নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস উদ্বোধন করার সময় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে সেনাবাহিনীর সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তরসহ ১১টি ইউনিট নিয়ে সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক, উন্নত ও যুগোপযোগী করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য আমাদের সরকার আর্মড ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমার পারিবারিক ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমার ছোট ভাই ক্যাপ্টেন শেখ জামাল একজন চৌকস সেনা অফিসার ছিলেন। আরেক ভাই শেখ কামালও সেনাবাহিনীর কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন।
সেনাবাহিনীর ৯টি ডিভিশনের আওতায় দেশে ৩০টি সেনানিবাস থাকলেও এতদিন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কোনো সেনানিবাস ছিল না। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাসের সহায়তা নিতে হতো। জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাসহ উপকূলীয় ৬ জেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মেকাবেলায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার দেড় হাজার একর এলাকায় আনুষ্ঠানিক সূচনা হল ১৭ হাজার জনবলের নবনির্মিত শেখ হাসিনা সেনানিবাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে আমরা পায়রা নদীর পাড়ে এই সেনানিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ এত অল্প সময়ের মধ্যে এখানে এই সেনানিবাস উদ্বোধনের উপযোগী করতে পারায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, এই এলাকায় সেনানিবাস হওয়ায় এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো।
এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে সেনানিবাসের বরিশাল অংশের বাকেরগঞ্জ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পটুয়াখালীর লেবুখালী অংশে যান এবং রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন। একই স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী ১৪টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও একটি কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে লেবুখালী থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মির্জাগঞ্জ উপজেলাধীন দেউলী ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, বাউফল উপজেলার সাবুপুরা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) নব নির্মিত হোস্টেল ভবন, কাজী আবুল কাশেম স্টেডিয়াম, দশমিনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্স ভবন, কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম চাকামইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম সাইক্লোন সেন্টার, কলাপাড়া উপজেলার পূর্ব ডালবুগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম সাইক্লোন সেন্টার, বাউফল উপজেলার হোগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম সাইক্লোন সেন্টার, বাউফল উপজেলার ধানদি মডেল হাইস্কুল-কাম সাইক্লোন সেন্টার, কলাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কমপে¬ক্স, গলাচিপা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপে¬ক্স, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডিজিটাল পাবলিসিটি স্ক্রিন, শহীদ শেখ কামাল স্মৃতি কমপে¬ক্সের (অডিটোরিয়াম) উদ্বোধন এবং গলাচিপা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হল রুমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
এরপর দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে (জেলা স্টেডিয়াম) যাবেন তিনি এবং বিকেল তিনটায় বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। জনসভা মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রী ৩৯টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ৩৩টি কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহম্মেদ, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের এবং তিন বাহিনীর প্রধান, সাবেক সেনাপ্রধানগণ ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।