নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নওগাঁ থেকে মিলন হোসেন ) : চায়ের কাপেই এক মাত্র ভরসা বদলগাছীর নারী উদ্যোগতা বিলকিসের, জীবন সংসারে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে তার স্বপ্নের সফলতা। নারীরা এখন নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। এভারেস্ট জয় করছে, পাইলট হয়ে বিমান চালাচ্ছে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করছে এবং সফলও হয়েছে।
কিন্তু নারী হয়ে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে সফল হওয়া সবচেয়ে কঠিন। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এক সফল নারী নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলকিস বেগম। শুধু মাত্র দু-বেলা দু মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সে দশ বছর আগে চায়ের দোকানের মাধ্যমে সংগ্রামী জীবনের যাত্রা শুরু করে শত ভাগ সফল হয়েছে। বিলকিস বেগম উপজেলার কাঁদীবাড়ি গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী ইয়াকুব আলীর স্ত্রী। তিনি এখন বদলগাছী উপজেলা মোড়ের চা দোকানি বিদ্যুতের মা নামে সবার কাছে পরিচিত।
চায়ের দোকান করে ইতিমধ্যে তিনি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে, ছেলেকে স্বাবলম্বী করে তাকেও বিয়ে দিয়েছেন। ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ৫ শতক জমি কিনে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই রুম বিশিষ্ট ইটের ঘর তুলেছে। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। কিন্তু তার আজকেই এই পরিচয়ের পেছনে আছে এক লম্বা ইতিহাস। প্রায় ১২-১৩ বছর আগে স্বামী ইয়াকুব আলীর হঠাৎ ব্রেন স্টোক করে, মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। নিজস্ব জমিজমা না থাকায় দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে বিলকিছ বেগম। এরই মধ্যে স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে শেষ সম্বল বাড়ির জমিটুকুও বিক্রি করে আশ্রয় নেয় অন্যের জমিতে। সংসারে পরিশ্রমী কেউ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে কাটতে থাকে দিন। বাধ্য হয়ে এক সময় ১০ বছরের ছেলে বিদ্যুৎকে অন্যের চায়ের দোকানে তিন বেলা খাওয়াসহ সামান্য কিছু বেতনে কাজে রাখেন।
কিন্তু এতে কি সংসার চলে, ফলে এক সময় তিনি নিজেই নামেন সংগ্রামের পথে। হিতাকাঙ্খী দু একজনের পরামর্শে এনজিও থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে উপজেলা মোড়ে ফুটপাতের ওপর শুরু করেন চায়ের দোকান। ছেলেকেও সহযোগিতার জন্য কাজ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। দোকানটি উপজেলা মোড়ে হওয়ায় অল্প দিনেই জনপ্রিয়তা পায় সবার কাছে।
কোন মতে তিন বেলা খেয়ে আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে পুঁজি বাড়িয়ে চায়ের সঙ্গে যোগ দেয় বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন হালকা নাস্তার আইটেম। গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে যোগ করে বুট মুড়ি মাখা ও সিগারেট। এতে আরও জনপ্রিয়তা বাড়ে বিলকিস বেগমের চায়ের দোকানের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে সরকারি অফিসগুলোতে কাজের জন্য আসা মানুষগুলো কাজের ফাঁকে একটু অবসরই যেন বিলকিস বেগমের চায়ের দোকান। সেখানে গেলে এককাপ চাও হয় সঙ্গে স্বল্প মূল্যে ক্ষুধা নিবারনের জন্য আছে মুড়ি মাখা, বিস্কুট ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে বাধাও এসেছে অনেক।
ফুটপাত দখল মুক্ত করায় বিপাকে পরেন তিনি। কিন্তু স্থানীয়দের সহযোগিতায় আর তৎকালীন চেয়ারম্যান সাহেবের কৃপায় ইউপি পরিষদের সামনে একটু জায়গা দেয়া হয়। সেখানে থাকে বেশ কিছু দিন। ইউপি পরিষদের সামনে চায়ের দোকান বিষয়টি খারাপ দেখালে সেখানেও আর থাকা হয়না তার। পরে পরিষদের পিছনে ফাঁকা জায়গায় স্থান দেয়া হয়েছে তাকে। এখন সেখানেই একমাত্র ছেলে বিদ্যুৎকে নিয়ে চলছে তার স্বপ্ন পূরুনের লড়াই। তবে দুঃখ সরকারিভাবে কোন সহযোগিতাই করা হয়নি তাকে।
স্থানীয় আল ফারুক স্টিলের প্রোপাইটর ফারুক হোসেন জানান, বিলকিস বেগমের স্বামী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারে রোজগারের কেউ ছিল না। বাধ্য হয়ে প্রায় বছর দশেক আগে বিলকিস বেগম তার ১২ বছরের ছেলে বিদ্যুৎকে নিয়ে এই চায়ের দোকান শুরু করে। এই ব্যবসা করে সে ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিয়েছে, জমি কিনে বাড়ি করেছে। নিঃসন্দেহে সে একজন সফল নারী। এ বিষয়ে সরকারি কোন পুরস্কার থাকলে সেই আগে পাওনাদার।
সংগ্রামী নারী বিলকিস বেগম বলেন, চা বিক্রি করে দিনে ২৫শ হতে ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয় এতে লাভ থাকে ৬০০ হতে ৭০০ টাকা। আপনাদের দোয়ায় আর আল্লাহ রহমতে ভালোই চলছি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি নাতি-নাতনি হয়েছে এবং ছেলেকেও বিয়ে দিলাম এই ব্যবসা করেই। জমি কিনে থাকার দুইটা ঘরও করেছি এই ব্যবসা করে একটু-একটু করে জমিয়ে।
বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, বিলকিস একজন পরিশ্রমী নারী। সফল নারীদের যে সরকারিভাবে বিভিন্ন পুরস্কার দেয়া হয় তা আমার জানা ছিল না এবং মহিলা অধিদপ্তর থেকে আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আগামীতে আমি অবশ্যই তার নাম প্রস্তাব করব।