নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : ফতুল্লা থানাধীন চাঁনমারী বস্তীতে মাদক সম্রাজ্ঞী ময়নার নোটবুকে পাওয়া গেছে মাসোহারা দেয়ার দীর্ঘমেয়াদী তালিকা। যে তালিকায় সরকারী কর্মকর্তা, শেল্টারদাতা, গ্রাহক সহ রয়েছে অনেকেরেই নাম। এই ডায়েরী নোটবুকের প্রায় ১৬ পৃষ্ঠাই লিখা আছে দিন তারিখ সহ মাসোহারার টাকার অংক ও গ্রহনকারীর নাম। যেখানে লিখার বানানে ভুল দেখা গেলেও হিসাবে ছিলো সঠিক।
আর এই নোটবুক খুলেই যাদের তালিকা আসে চোখ কপালে উঠার মতই। জনগনের বন্ধু পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা নিরাপত্তা ও মাদক নির্মূলে মূল ভূমিকা পালন করে পুলিশ, এটাই হওয়া স্বাভাবিক। তবে উদ্ধার হওয়া নোটবুকের তালিকা বলে ভিন্ন কথা। যেখানে লিখা রয়েছে ফারি পুলিশ ৩৩০০, আবগারি ৬ হাজার, সিআইডি ২০০০, টহল পুলিশ ৫০০, কোর্ট পুলিশ ১০০, সাইফুল পুলিশ ১০০, করিম পুলিশ ২০০, রুমান পুলিশ ৫০০, কামরুলের ফর্মা ৫০০। বাদ যায়নি কথিত সাংবাদিকও। সেখানে বানান ভুল করে লিখা আছে সাংবাদি ৩৫০। এছাড়াও ২০ জনের নাম রয়েছে নোটবুকের এই মাসোহারা দেয়ার দীর্ঘ তালিকায়। যারা প্রতিনিয়তই মাদক বিক্রিতে সহায়তা করে হাতিয়ে নিচ্ছে অগনিত টাকা।
এদিকে চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনায় সারাদেশব্যাপী চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ জুলাই শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার দিক নির্দেশনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন র্যাব সদর দপ্তরের (ঢাকা হেড কোয়াটার) আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. গাউছুল আজম। র্যাব-১১ এর সহযোগিতায় বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পযন্ত ফতুল্লা থানাধীন চাঁনমারী বস্তীতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় ইয়াবা ও গাজা সেবনসহ মাদক বিক্রির দায়ে দুই নারী, এক তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) সহ ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উদ্ধার করা হয় মাদক সম্রাজ্ঞী ময়নার নোটবুক, বিপুল পরিমান গাজা, পেথেডিনের সিরিজ সহ সেবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি।
অভিযানে আটককৃতরা হল মাদক সম্রাজ্ঞী ময়না খাতুন (৩৫), জরিনা বেগম (৩০), দ্বীন ইসলাম (৩৫), মো. রমজান আলী (৪০), পান্না মিয়া (৩০) প্রত্যেককে ১ বছর করে কারান্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও আমান (১৮), শরীফুল ওরফে জাম্বু (৩০), হারুন আর রশিদ (৩০), মনির হোসেন (৩৫), আজিজ (২৫), রাসেল (২৬), তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) কাজল (৩৮) কে ৬ মাস করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়াও মাদক বিক্রেতাকে সহযোগিতার অপরাধে মালেককে ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
এ ব্যপারে মাদক সম্রাজ্ঞী ময়না ও বিক্রেতা জরিনা জানান, এসব ব্যবসায় তাদের সাথে রয়েছে বিশাল গডফাদার। যাদের না ধরলে কোনওদিনই চানমারীতে এ ব্যবসা বন্ধ করা যাবেনা। গডফাদারদের নাম জানাতে অস্বিকার করলেও সোহরাব আর মোহাম্মদ আলীর নাম জানায় যারা এই ব্যবসায় তাদেরকে ইন্দন দিয়ে থাকে বলে জানিয়েছে। আরও জানায়, মাদক বিক্রিতে সহযোগীতায় টাকা নেয় টহল পুলিশ ও থানার ওসিও। দিতে হয় প্রতিনিয়ত ২ থেকে ১ হাজার সর্বনিম্ন।
এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ওবায়দুল কবির বলেন, আমাদের সংস্থার কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এ জেলায় মাত্রই জয়েন করেছি। আপনারা সহযোগীতা করবেন মাদকের সাথে জড়িতদের ছাড় দিবোনা।
এ প্রসঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরের আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. গাউছুল আজম জানান, মাদক বিরোধী অভিযানে ১২জনকে কারাদন্ড ও একজনকে অর্থ দন্ড প্রদান করেছি। একজন মাদক বিক্রেতা ময়নার কাছ থেকে নোটবোক উদ্ধার হয়েছে যেখানে তালিকা পাওয়া গেছে। আমরা এটি তদন্ত করবো। মাদকের ব্যপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। এজন্য স্থানিয় প্রশাসন ও সাংবাদিকেদের সহযোগীতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, এখানে সপ্নডানা নামে একটি অবৈতনিক স্কুল রয়েছে। যেটি আমিই একসময় নারায়ণগঞ্জে চাকরী করার সুবাদে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। মুক্ত করেছিলাম এখানে মাদকের রাজ্য। কিন্তু আমি যাওয়ার পর বেশ কয়দিন যাবতই শুনতে পাচ্ছি, ধীরে ধীরে এখানে মাদকের আখড়া রুপান্তরিত হচ্ছে। এরপর জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার দিক নির্দেশনা ও র্যাব হেড কোয়াটারের অনুমতি সাপেক্ষে আমি এ অভিযান চালাই।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন, সহকারী পরিচালক বাবুল আক্তার, নাজমুল আহসান, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ওবায়দুল কবির, উপ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।