নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জের ওষুধ ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সংঘর্ষ এবং এক ব্যক্তির কব্জি কাটার অভিযুক্ত মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খানকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ১লা ডিসেম্বর মঙ্গলবার জেলা আমলি আদালত–৫ এ জামিন আবেদন করলে বিচারক মুক্তার মন্ডল তা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় ওয়ারেন্ট থাকার পরও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বৈদ্যারগাঁও এলাকায় গত ৯ সেপ্টেম্বর একই গ্রামের রুবেল (৩২) ও কবির (২২) এর হাতের কব্জি কেটে কাটা কব্জি নিয়ে মিছিল করে শাহজাহান খান ও তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীরা। এমন তান্ডব চালানোর ঘটনায় সর্বশেষ মামলায় পলাতক থেকে শাহজাহান খান ও তার সহযোগিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বীরদর্পে মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মামলা প্রত্যাহার করাতে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে মঙ্গলবার ওই মামলার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহজাহান খান।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে গজারিয়া উপজেলার বৈদ্দারগাঁও গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় রুবেল (৩২) ও কবির (২২) নামে ২ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে রুবেলের এক হাতের কব্জি কাটা ও আরেক হাতের দুই আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। আর কবিরের গায়ের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
প্রথমে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার পরিবর্তন হলে তাদের ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন। এদিকে, শাহজাহান খান সহ তার সহযোগি ৮ আসামীকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত ।
এ ঘটনার দুই দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর আহত রুবেল স্ত্রী তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাজাহান খানকে প্রধান আসামী করে ২৪ জন নাম উল্লেখ করে ও ১০/১২জন অজ্ঞাত আসামীর নামে মামলা দায়ের করে ছিলেন।
এর পূর্বেই সন্ত্রাসী শাহজাহান খানের ২০ সহযোগি আসামী আদালতে আত্মসমর্পন করলে তাদেরকে কারাগারে পাঠায় আদালত । পরবর্তীতে ২০ আসামীর প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ড চেয়ে গজারিয়া থানা পুলিশ আদালতে আবেদন করলে ১লা ডিসেম্বর মঙ্গলবার শুনানী শেষে জামান খান, আল আমিন খান, মাসুম খান, সাইদুর খান, সোলাইমান খান, শিকদার, আরমান খান, ফজলুলকে ২ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেয় আদালত।
শাহজাহান খান ১লা ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় হাজির হয়ে জেলা আমলি আদালত–৫ এ জামিন আবেদন করলে বিচারক মুক্তার মন্ডল তা নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন এবং একই সাথে বিধি মোতাবেক শাহজাহান খানের সহযোগি আট (৮) জন আসামীকে বিধি মোতাবেক জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে ।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির স্বঘোষিত সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মৃত হায়দার আলী খানের পুত্র শাহজাহান খান নিজে ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করে নারায়ণগঞ্জে যেমন বিশাল চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাতেন তেমনি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, আধিপত্য বিস্তার করে বালু সন্ত্রাসীসহ নারী কেলেংকারীর মতো অপকর্ম করে বেড়াতেন ।
হাতের কজ্বি কেটে মিছির করার বিষয়ে গজারিয়া থানায় দায়ের করা মামরার বিবরণ থেকে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলায় গত ৯ সেপ্টেম্বর রুবেল ও কবির নামের দুই যুবককে কুপিয়ে হাতের কব্জি কেটে উল্লাস করার ঘটনায় জামান খান, আল আমিন খান নূরুজ্জামান খান, মাসুম খান, সািইদুর খান, সোলাইমান খান, শিকদার, আরমান খানসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০/১২ জন সন্ত্রাসীকে অজ্ঞাতনামাকে আসামী করে ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬/১১৪ পেনাল কোড ধারায় গজারিয়া থানায় তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ।
হাতের কজ্বি কেটে উল্লাস করে এলাকায় তান্ডব চালানোর এক পর্যায়ে থানায় মামলা দায়েবর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে মুন্সিগঞ্জ থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জে আশ্রয় নেয় শাহজাহান খানসহ তার অনুসারিরা । শাহজাহান খান দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর ও সস্তাপুর এলাকার পৃথক স্ত্রী দের সহায়তায় পুলিশকে ম্যানেজ করে শহর অবস্থান করেই ব্যাপক চাঁদাবাজি করে ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়েই ।
এই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নাম ব্যবহার করছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। একই সাথে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সাথে কুক্ষাত এই অপরাধী শাহজাহান খানের সাথে তোলা ছবি প্রদর্শন করে নারায়ণগঞ্জে বাড়তি সুযোগ–সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে বলেও জোড়ালো গুঞ্জন রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ আদালত কর্তৃক নানা অপরাধের হোতা শাহজাহান খান কে কারাগারে ও তার আট সহযোগিকে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক আলোচনা সমালোচার সৃষ্টি হয়েছে । অনেকেই বলেছেন , বহু অপরাধ করে ব্যাপক তদ্বির চালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না এই অপরাধী চক্রের । এবার বিচার হলেই শান্তি ফিরে আসবে গজারিয়ায় ।