খাদ্য সহায়তা চেয়ে উল্টো শাস্তি পাওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩–এ কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়ে উল্টো শাস্তি পাওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ ২৩ই মে দুপুরে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ৩৩৩–এ কল করে খাদ্ যসহায়তা চাওয়া বৃদ্ধ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চারতলা বাড়ির পুরো মালিক নন। চারতলা বাড়ির মালিক ছয় ভাই ও এক বোন। তিনি বাড়ির মাত্র তিনটি কক্ষের মালিক। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আজ রবিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে ফরিদ যে টাকা খরচ করেছেন, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ ঘটনা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল; তা খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরিদ আহমেদকে কোন ফান্ড থেকে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো একটি ঐচ্ছিক ফান্ড থেকে এ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

গত বুধবার ৩৩৩–এ কল করে খাদ্য সহায়তা চান সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দেভোগ এলাকার ফরিদ আহমেদ। খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন জানতে পারেন, সাহায্য চাওয়া ওই ব্যক্তি চারতলা বাড়ির মালিক এবং তিনি হোসিয়ারি কারখানার মালিক। তখন সদরের ইউএনও আরিফা জহুরা ৩৩৩–এ কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন।

২২ই মে শনিবার বিকালে সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাগবাড়ি শেষ মাথা এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, পিতার রেখে যাওয়া ভবনের ৩য় তলার এক পাশের ছাদে টিনশেডের ২টি ছোট্ট কামড়ায় একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন ফরিদ উদ্দিন (৫৭)। একটি হোসিয়ারি দোকানে চাকরি করে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কোনো মতে চলে তার সংসার চলতো।

মাস তিনেক আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে বাম চোখটির দৃষ্টি শক্তি হারানোর পাশাপাশি কথাবার্তাও খুব একটা গুছিয়ে বলতে পারেন না। কখনো কখনো দুপুরেই ভুলে যান সকালে কি বলেছেন। তাই সেই পুরনো দোকানেই মালিকপক্ষ মানবতার খাতিরে তাকে এখনও চাকরি করার সুযোগ দিয়েছে ১০ হাজার টাকা বেতনে।

লকডাউনের কারণে সংসার আর নিজের চিকিৎসা নিয়ে বেশ বেগ পোহাচ্ছিলেন এই বৃদ্ধ। কিন্তু ৩৩৩ নাম্বারে প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য অনেক খাদ্য পাওয়ার আশায় ফোন করাটাই যেন কাল হলো তার।

সেই কথিত ৪ তলা বাড়ির মালিক ফরিদ উদ্দিন, তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে নিয়ে অসহায়ের মতো এক কোণে কাঁদছিলেন। কথা বলতে গেলে ভয়ে কিছুই বলছিলেন না। এরপর ফরিদ উদ্দিনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মূল বিষয়টি বলার পর মুখ খুললেন তারা।

ফরিদ ও তার স্ত্রী হিরন বেগম জানালেন, প্রকৃতপক্ষে প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য সরকারের তরফ থেকে অনেক খাদ্য পাওয়ার আশাতেই ৩৩৩ এ ফোন দিয়েছিলেন ফরিদ উদ্দিন। ফোন করার ২ দিন পর সেখান থেকে তার ঠিকানা জানা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন ইউএনও আরিফা জহুরাসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

২২ই মে শনিবার ফরিদ বলেন, ওই চারতলা বাড়িটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমরা ছয় ভাই ও এক বোন এই বাড়ির মালিক। আমি তিনতলার ওপর ছাদে টিনশেডের দুটি রুম ও নিচতলায় একটি রুম পেয়েছি। এ ছাড়া আমি মাসুদ আহমেদ নামের একটি হোসিয়ারি কারখানায় ১২ হাজার টাকা বেতনে কাটিংয়ের কাজ ও দেখাশোনা করি। আমার এক ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং আমি নিজেও স্ট্রোক করেছি। আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করেছি। পরদিন উপজেলা থেকে খাদ্যস হায়তা করা হবে জানান। তবে স্থানীয় কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে বলেন আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন, এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন ও আমাকে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে সহায়তা করতে নির্দেশ দেন।

ইউএনও আরিফা জহুরা সাংবাদিকদের বলেন, ফরিদ নিজেই গত বৃহস্পতিবার আমাকে জানিয়েছিলেন তিনি চারতলা বাড়ির ও একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক। এখন ওই ব্যক্তির সম্পর্কে কথাবার্তা আসছে, তিনি চারতলা পুরো বাড়ির মালিক নন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত