কোন্দলে ডুবছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে গিয়ে দলটির একাধিক নেতাকর্মী জড়িয়ে পড়েছে কোন্দলে। আর এই অভ্যন্তরিন কোন্দল দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। যা এখন প্রায় সময়ই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে মারামারি পর্যায়ে চলে গেছে। এতে করে দলকে শক্তিশালী করার বিপরীতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় কোন্দলে ডুবতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির জেলা ও মহানগর কমিটি থেকে শুরু করে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছা সেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও এখন বিভক্তি হয়ে নিজ নিজ বলয়ের কর্মী প্রস্তুত করা হয়েছে। এক একজন নেতা তার বলয়কে শক্তিশালী করতে দলটির অন্য নেতাকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিজ ব্যানারে কর্মী সমর্থক দিয়ে নানা কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিযোগীতা থেকে বের হয়ে নিজ নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় মামলা এবং গ্রেফতারও হয়েছে নিজ দলেরই নেতাকর্মীরা।

সম্প্রতি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া তার পুত্র মোহাম্মদ রিফাতকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাড়িতে পুলিশের অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। এরপর ঘটনার পর হাসপাতালে দেখতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় ছাত্রদল নেতা সাগর সিদ্দিকী।

এদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়। তাই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটিতে প্রবেশকে কেন্দ্র করে অন্তঃকোন্দল চলছিলো। এরই সূত্র ধরে গত ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ গিয়াসউদ্দিনের একান্ত সহযোগী এবং নাসিক ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ভেন্ডার ইকবাল হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল হকসহ সন্ত্রাসী বাহিনী একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষস্থলে হামলা চালিয়েছিলো। ঐ সভায় তাদের লাঠি-সোটা, লোহার রড দিয়ে হামলায় এসময় জেলা বিএনপির ভাপ্রাপ্ত আহŸায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, থানা বিএনপির আহŸায়ক আব্দুল হাই রাজু, সদস্য সচিব শাহ আলম, যুগ্ম-আহŸায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হয়।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শক্তিশালী আরো কয়েকটি বলয় বিভিন্ন থানা-উপজেলাতেও দীর্ঘদিন ধরে মুখোমুখি অবস্থান করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ক্ষমতার সুবিধা নিবেন এমন পরিকল্পনা রয়েছে কয়েকটি পক্ষের। যার ফল ভোগ করতে এখন সকল পক্ষের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একে অপরকে রাজপথে কোনঠাসা করতেও নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা তৈমূর আলম, মহানগরে সাবেক এমপি আবুল কালাম-এড. সাখাওয়াত, জেলা কমিটির মামুন মাহমুদ ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, ফতুল্লায় শাহ আলম। যুবদলে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মুজিব রানা, সাগর প্রধান এমন অসংখ্য নেতাদের মাঝে এখন বিভেদ চলায় দলটির নেতৃত্ব কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপি সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ-মান্নান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সায়েমের নেতৃত্বে বিশাল একটি বলয় গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে দিপু ভূঁইয়া, মোশাররফ, মাহবুবের আরেকটি বলয় সক্রিয় রয়েছে। এই বলয়ের নেতাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। এছাড়া রাজপথ এবং মঞ্চ দখলে রাখতে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। অনেক সময় প্রতিপক্ষকে সভা মঞ্চের কাছে আসতে এবং বক্তব্য দিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এসব নিয়ে বিএনপির এই দুই পক্ষ একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়ে আলোচিত হয়েছে। তবে এই বলয়ের বাইরেও বিএনপিতে একাধিক নেতা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে উভয় বলয়ের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে বলেও বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি।

add-content

আরও খবর

পঠিত