নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : সুদূর চীনের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। সর্বশেষ যার সংক্রমন ইতালী ফেরত দুই বাংলাদেশীর মধ্যেও ধরা পড়ে। এরা নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতো বলেও জানা গেছে। যার ফলে জেলা জুড়ে অনেকটাই উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। ইতমধ্যে রাজধানীর সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে দাবী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। তাই ন্যায্য মূল্য বজায় রাখতে তাদের মজুদ রাখা সরঞ্জামাদী উদ্ধার করতে ভ্রাম্যমান আদালতের ( মোবাইল কোর্টের ) ধারাবাহিক অভিযান জরুরী বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
সম্প্রতি ভাইরাসের ঘটনায় দেশে যেন কেউ মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেশি না নিতে পারে এবং মজুদ করতে না পারে সে জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এখন মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতাও তৈরি হয়েছে। সে সুযোগে এটা নিয়ে বাজারে কোনো ধরণের ব্যবসা হয় কিনা পেঁয়াজের মতো, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট ব্যবহার করতে হবে। কেউ যেন বেশি দাম না নিতে পারে। মজুদ না করতে পারে।
এমন নির্দেশনার পর মঙ্গলবার ( ১০ মার্চ ) দুপুরে শহরের কালিরবাজারে বিভিন্ন ফার্মেসীতে অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় যৌথ পরিচালনায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ জনকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড সহ ৮ ফার্মেসীকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক, আব্দুল মতিন, নাছরিন আক্তার। এছাড়াও উপস্তিত ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জেলার সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।
প্রসঙ্গত, একসময় শুধুমাত্র প্রয়োজনে ব্যবহার হওয়া মাস্ক (মুখোশ) এখন যেন সোনার হরিণে রূপ নিতে যাচ্ছে। করোনা নামক এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতার বিকল্প নেই। যার জন্য চাহিদা বেড়েছে ধুলোবালি ও সার্জিক্যাল মুহুর্তে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মুখে ব্যবহৃত সেসব মাস্কের। এমনই চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসী ও ফুটপাতে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের দোকানীগুলোতে। রয়েছে বেশ ক্রেতা সমাগম। তবে হঠাৎ করে মাস্কের এমন মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষুব্দ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
সাধারণ ক্রেতারা জানায়, করোনা ভাইরাস এর কারণে আমরা কিছুটা আতংকিত। তাই সাবধানতা অবলম্বন করার জন্যই আসলে মাস্কের দোকানে কিনতে আসা। তবে এসব মাস্ক এর মূল্য আগের তুলনায় এখন আর শুধু দ্বিগুন নয় বেড়েছে বহুগুন। আবার কেউ কেউ যা ইচ্ছে মূল্যেও ক্রেতাদেরে ঠকাচ্ছে বলেও অভিযোগ ক্রেতা সাধারণের। এ নিয়ে বাকবিতন্ডায়ও জড়িয়েছে অনেকে। যা পরে মারামারিতেও রূপ নেয়। লাঞ্ছিত হয়েছে অনেক ক্রেতা সাধারণ। তাই দ্রুত এর লাঘাম টেনে ধরতে বেশী বেশী মোবাইল কোর্ট এর অভিযান সহ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের মজুদ পন্য উদ্ধারেরও অনুরোধ জানায় তারা।
শহরের ফুটপাতে ঘুরে বিক্রি করা দোকানীতে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ওয়েস্টেজের টুকরো থান কাপড়ের তৈরী মাস্কগুলো যেখানে প্রতি পিস ৫ টাকা থেকে সবোর্চ্চ ১০টাকায় বিক্রি হত, সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০টাকায়। আরো একটু ভালো মানের (নেট) মাস্ক এর মূল্য ১৫০ থেকে ২৫০টাকা। যা পুর্বে মূল্য ছিল মাত্র ৩০টাকা। অপরদিকে বিভিন্ন ফার্মেসী বা স্টলে বিদেশি ফিল্টার মাস্ক ও সার্জিক্যাল মাস্ক সহ নানা ধরণের মাস্কের সমাহার দেখা যায়। যেগুলোর মান অনুযায়ী মূল্য র্নিধারণ করা হয়েছে। যেখানে সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা থেকে সবোর্চ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি করা বিদেশি ফিল্টার মাস্ক বাজারে নেই বললেই চলে। এই সংকটের কারণে ফিল্টার মাস্ক খুচরায় ৩০ থেকে ৫০ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। সার্জিক্যাল মাস্কগুলো সাধারণত চীন থেকেই আমদানি হয়। কিন্তু এখন চীনে করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানি আপাতত হচ্ছেনা। তাই মাস্কের পাইকারী এবং খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে। তাই এর সাথে তাল মিলিয়ে অন্যান্য মাস্কের মূল্য ও অটোমেটিক সকলেই বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাস্ক ব্যবহারকারীরা জানান, পরিবারের সবাই স্বাস্থ্য সচেতনতায় আগে থেকেই মাস্ক ব্যবহার করে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের আতংকের কারণে আরেকটু বেশি সচেতন হয়েছে সবাই। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর পায়তারা করছে। আমার মনে হয় না দেশে মাস্কের সংকট আছে।