নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদকে নিয়ে সকলের নজরই এখন দলের সভা নেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। ইতমধ্যেই সম্মেলনে যুক্ত হতে ঢাকায় সারাদেশ থেকে এসে জড়ো হয়েছেন যে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা, তাদের জটলাতে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ঝড়। গত ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব আছেন শেখ হাসিনা। এর আগে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়া বা দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই তুলেছেন কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবারই দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সমস্বরে এমন কথাই জানিয়েছেন, আজীবন তাঁকেই দলের নেত্রী হিসেবে চান তারা।
এদিকে অন্যান্য পদগুলির পাশাপাশি সর্বত্রই গুঞ্জনে ভাসছে মূলত দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও লাখো কর্মীর মাঝে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক কে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ শনিবার ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুদিনের কাউন্সিলে গঠিত হবে আগামী নেতৃত্ব। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের কথা শেখ হাসিনা বললেও দলের নেতারা এজন্য তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
এর আগে গত বুধবার রাতেই নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে নিয়ে তাকে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতের বিষয়টি ওবায়দুল কাদের দলের অন্য দু-এক জন সহকর্মীর কাছে স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।-খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের।
এ ছাড়া গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতারাও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সারা দেশে কাউন্সিলরদেরও এমন বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল সাধারণ সম্পাদকই নয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসছে পরিবর্তন। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের আভাসের মাধ্যমে এমন বার্তা বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের নতুন সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন বলে এমন আভাস পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে তার অনুসারীদের অভিনন্দন এবং ওই পদে সংবাদ মাধ্যেমে চমকের খবর আসার পর সৈয়দ আশরাফের এ বক্তব্য। এলো।
সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় আসা বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে শুক্রবার রাতে সোনারগাঁও হোটেলে যান সৈয়দ আশরাফ। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এ সময় তার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে আশরাফ বলেন, আসতেও পারে, কাউন্সিল ক্যান মেইক এনি ডিসিশন। তবে এটা আলোচনা, কানাঘুষা- এইটাই বলতে পারবেন, এর থেকে আর বেশি কিছু না। আমি জানি কী হবে, আমি আর সভানেত্রী ছাড়া কেউ জানে না হোয়াট উইল গোয়িং টু হ্যাপেন। আফটার দ্য থ্রিল, আপনারা জানবেন হোয়াট হ্যাপেন্ড। তবে এই কাউন্সিলে নেতৃত্বে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না বলে সম্মেলনের আগের রাতে ইঙ্গিত দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কাউন্সিলে খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। এটা ইনক্রিমেন্টাল হয়। যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন বা অসুস্থ আছেন তাদের বাদ দিয়ে নতুন ইনডাক্ট করা হয়। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়েই এই নতুন কমিটিটা করা হবে।
বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আশরাফ এই পদে আসেন ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনার বন্দি হওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার উল্টোযাত্রার মধ্যে। ওই সময় বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর পূর্ণ আস্থা অর্জন করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরও একই দপ্তর পান তিনি। সাত বছর গুরুত্বপূর্ণ ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার মধ্যে তার নিয়মিত সময় না দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ওঠে।
এর মধ্যেই গত বছর আকস্মিকভাবে আশরাফকে দপ্তরবিহীন করেন শেখ হাসিনা। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড়ের মধ্যে এক সপ্তাহের মাথায় সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করেন তিনি।