নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরের দলাদলিতে প্রাণ হারালো সুব্রত মন্ডল জয় (২২) নামে এক যুবক। প্রায় ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হাসপাতালে থেকে ২২শে মে রবিবার দুপুরে লাশ হয়ে ফিরেছে সুব্রত।
এরআগে ১৫ই মে রাতে সুব্রত মন্ডল জয়কে তার মায়ের সামনে থেকে ইয়াবা সায়েম গংরা তুলে নিয়ে যায়। পরে নগরীর জিউস পুকুর পাড় শনি মন্দির এলাকায় পশ্চিম দেওভোগ ইউসূফ মিয়ার বাড়ীর সামনের রাস্তায় ফেলে ১৫ থেকে ২০ জন তার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে মৃত ভেবে তাকে বাড়ির সামনে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা।
জানা গেছে, সুব্রতকে যারা মারধর করেছিল তারা বর্তমান কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের লোকজন। আর সুব্রত সাবেক কাউন্সলর শফিউদ্দিন প্রধানের হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছিল। মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় একটি ভিডিও বার্তাও দিয়ে গিয়েছিল সুব্রত। যেখানে তাকে মারধরের কারণ ও সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করতে শোনা যায়।
সেখানে তিনি বলেছেন, নাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের পক্ষে কাজ না করায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়াও নির্যাতন মিশনে অংশগ্রহণকারীদেরও নাম বলেছেন। তারা হলো : ইয়াবা সায়েম, সাজিত, নাঈমুদ্দিন সাজু, দোলন, রাকেশ, ড্যান্ডি আল আমিন, শুভ, ভোটকা শুভ, নিরব, প্রণয়, নোমান সিকদার, অন্ত সাহা ও নাপতা প্রিতম।
ভিডিও চিত্রে সুব্রত মন্ডল জয় বলেছে, নাসিক নির্বাচনে ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মনির হোসেনের পক্ষে তাকে কাজ করতে বলেছিল সায়েম গংরা। কিন্তু সে বলেছে করোনার সময় শফিউদ্দিন আমাদের সাহায্য করেছে। আমি তার নির্বাচন করবো। এটা তারা মনের ভেতর রেখে দেয়। নির্বাচনে শফিউদ্দিন পরাজিত হয়। মনির হোসেন বিজয়ী হয়। প্রতিশোধ নিতে ইয়াবা সায়েম, সাজিত, নাঈমুদ্দিন সাজু, দোলন, রাকেশ, ড্যান্ডি আল আমিন, শুভ, ভোটকা শুভ, নিরভ, প্রণয়, নোমান সিকদার, অন্ত সাহা ও নাপতা প্রিতমসহ ১৫ থেকে ২০ জন আমাকে নির্যাতন করেছে।
নিহতের মা গৌরী মন্ডল, বোন লিপি মন্ডল ও শম্পা মন্ডল আহাজারি করে বলেন, কাউন্সিলর মনিরের লোকজন সুব্রতকে হত্যা করিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিক ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের নাম্বারে ফোন দেয়া হলে তার সচিব কলটি রিসিভ করে জানান, কাউন্সিলর সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে গেছে তিনি অসুস্থ্য। তার সকল ব্যবহৃত সিম ই আমার কাছে।
অন্যদিকে, সাবেক কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান জানান, সুব্রত মন্ডল আমার কর্মী ছিল। আমি এখন দাহ করার জন্য শম্মানে আছি। যারা এ কর্মকান্ড করেছে তারা কাউন্সলর মনিরের লোক। যা নিহত সুব্রতই বলেছে। এদিকে তাদের অভ্রন্তরীন দ্ব›দ্ব কিংবা দলাদলী রয়েছে কিনা এমন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ২ বারের কাউন্সিলর। আমার ভাইও কাউন্সিলর ছিলো। সেবা দিতে এসেছি। আমরা সেবা দিয়েছি। প্রকৃত ঘটনা কি তা সকলেই যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখেছে। আমি চাই এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনিচুর রহমান জানান, আমরা ইতমধ্যে ১১ নং আসামী মানিককে গ্রেফতার করেছি। সকল আসামীকে গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা তৎপর রয়েছি, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।