নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ও উৎসব মূখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ অষ্টমী স্নান উৎসব। সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় স্নানের লগ্ন শুরু হয় বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে। লগ্ন শুরুর পরপরই পূণ্যার্থীদের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদে। ১৩টি স্নানঘাটে দল বেধে, স্বপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী স্নানে অংশ নিচ্ছেন তারা। তীর্থকেন্দ্র এবং স্নানঘাট গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে পূণ্যার্থীদের সমাগম ছিল চোখের পড়ার মত। এরপর লগ্ন অনুযায়ী শুরু হওয়া এই পূণ্যস্নান শেষ হয় আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা ৩২ মিনিটে। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। তাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দ।
হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর, এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় পূণ্যার্থীরা আদি ব্রহ্মপুত্র নদে দুই দিন ব্যাপী এই অষ্টমী স্নানোৎসব পালন করে। স্নানের সময় ফুল, তুলশি পাতা, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে তর্পণ করছেন তারা।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিব জানান, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ। পুলিশ, র্যাব ও আনসারের দেড় সহস্রাধিক সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। বসানো হয়েছে ওয়াচ ট্ওায়ার ও নিরাপত্তা চেকপোস্ট। এছাড়াও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে তীর্থস্থানের ৩ কিলোমিটার এলাকা।
এ ব্যাপারে স্নান কমিটির সদস্য উত্তম সাহা জানায়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক, র্যাব-পুলিশসহ পূণ্যার্থীদের সার্বিক সহযোগীতায় এবারের স্নানোৎসব অত্যন্ত সুষ্ঠু ও আনন্দঘন পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাথার আশা ব্যক্ত করি।
কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে আসা তীর্থযাত্রী গীতারানী (৫৫) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি প্রতি বছর স্নানোৎসবে অংশ নেন। এবার তিনি একা আসেননি। নদী পথে ট্রলার নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে স্বপরিবারে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন।
লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম ,১ নং ঢাকেশ্বরী টিন লাইন ও বনগুন মিলন সংঘ, নিপসম, সেবা সংঘ, হিন্দু কল্যাণ পরিষদসহ অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দর্শনাথীদের খাবার সরবরাহ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করেছে।বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রেডক্রিসেন্ট এর উদ্যোগে দেয়া হচ্ছে পূণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা। অষ্টমী স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে লোকজ মেলা ।
দুই বছর আগে রাজঘাটের কাছে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে হুড়োহুড়িতে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটে। ঘটনাটি পূণ্যার্থীদের স্মরণ থাকলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোন ভয় বা আতংক নেই বলে জানান আগত তীর্থযাত্রীরা। এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে স্নানোৎসব। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিয়েছেন বলে স্নান উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে স্নানোৎসব উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে সোমবার আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উদযাপন পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। উদযাপন পরিষদের আহবায়ক সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী, বাবু পংকজ দেবনাথ, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিব, বন্দর থানার ওসি আবুল কালাম, সোনারগাঁও থানার ওসি শাহ মঞ্জুর কাদের প্রমুখ।