নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: ইসহাক। বয়স তেতাল্লিশ। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের প্রভাকরদী এলাকার খালেত মিয়ার ছেলে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভালো। বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ করে একদিন বড় চাকুরী করবে। সেই উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে এগোচ্ছিলেন তিনি। ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে কামেলও পাশ করেন। তবে হাড়ে মার্বেল রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠ্যাৎ তার দুই পাই ভেঙে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয়নি। অন্য আর দশটি সাধারণ মানুষের মতো পায়ে হাটা তার থেমে যায়। এখন ট্রেচারে ভর করে তাকে চলতে হচ্ছে। তবে পায়ে চলার শক্তি হারালেও, মনবল আর প্রবল ইচ্ছাশক্তিই যেন তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সময় নষ্ট না করে নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। ট্রেচারে বসেই বাড়িতে মুরগির খামার গড়ে তোলেছেন। তিনি এখন এলাকায় আত্মনির্ভরশীলতার এক প্রতীক। খামার করে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
ইসহাক বলেন, আত্মবিশ্বাস, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম তার এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করে দিয়েছে। ২০০১ সালে মাস্টার্স পরীক্ষার দুইদিন আগে হঠ্যাৎ তার দুই পা ভেঙে যায়। পরে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। লেখাপড়া যতটুকুই রপ্ত করেছেন। তা দিয়েই তিনি জীবন গড়ার কাজে নেমে পড়েন। প্রথমেই এলাকায় হাজী খালেক কিন্ডারর্গান্টেন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০১৪ সালে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি মুরগির খামার। প্রথমে ৬০০ পিস ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা দিয়েখামারের যাত্রা শুরু করেন। তবে সেবছর তার প্রায় ২ লাখ টাকার মতো লোকসান যায়। বন্ধ হয়ে যায় তার খামার। পরে দারদেনা করে আবারও খামারে বাচ্চা উঠান। এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার খামারে ১৫ হাজার পিস পূর্ণবয়স্ক (কক) সোনালী মুরগি রয়েছে। তার খামারে পাঁচ যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বারবার ধাক্কা খেয়েছি; তার পরও হতাশ হইনি। আশা ছিল উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবার স্বপন পূরণ করব। ভালো কোনো চাকরী কবর। দেশের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিব। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনি। ১৯৯৮ সালে ঢাকার আলীয়া মাদ্রাসা থেকে কামেল পাশ করি। এক পর্যায়ে নিজের এলাকায় বাবা হাজী খালেক কিন্ডারর্গান্টেন নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করি। আশা ছিল উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করব। ২০০১ সালে ঢাকার জগন্নাথে মাস্টাস পরীক্ষা অংশ নেয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে হাড়ে মার্বেল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের হাড় ভেঙে যায়। ভেঙে যায় উচ্চতর শিক্ষা লাভের স্বপনও। পরে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করে কোনো লাভ হয়নি; তবে হতাশ হইনি। স্থানীয় এক পোল্ট্রি খামারির পরামর্শে ২০১৪ সালে বাড়ি একটি খামার স্থাপন করি। প্রথম বছরই ব্যবসায় প্রায় ২ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়। পরে উপজেলা যুবউন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দারদেনা করে আবারও ১৫০০ পিস বাচ্চা খামারে তোলি। বর্তমানে খামারে ১৫ হাজার পিস (কক) পূর্ণবয়স্ক মুরগি রয়েছে। ইসহাক এখন স্বপ্ন দেখছেন, নিজের খামারে উৎপাদিত মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাবেন। তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। বাচ্চা কমমূল্যে খামারিদের মাঝে বিক্রি করবেন। এতে এলাকায় নতুন উদ্যোগক্তা সৃষ্টি হবে; বেকার সমস্যাও সমাধান হবে। ইসহাক জানান, তিনি এলাকায় প্রায় ১৩০ শতাংশের তিনটি পুকুর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। সেখান থেকেও তার বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। সরকারের কাছে ইসহাকের দাবী, স্বল্পসুদে ঋণ পেলে তিনি খামারের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতেন।
আড়াইহাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডাক্তার মো: ফারুক বলেন, ইসহাক খামারি হিসাবে সফল। তিনি নিজের কর্মদক্ষায় এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উৎপাদন বৃদ্ধি ও রোগবালাই দমনে আমরা তাকে সর্বদা সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা যুবউন্নয়ন কর্মকর্তা মামুন মজুনদার বলেন, ইসহাক যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করেছেন। তিনি এলাকায় বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই খামার গড়ে তোলে নিজেকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলছেন।