নারায়ণগঞ্জ র্বাতা ২৪ ( সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ) : সিদ্ধিরগঞ্জে রিমান্ডে নেয়া আসামীকে নির্যাতনের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামীর দুই স্ত্রীকে পুলিশ ও দুই সোর্স কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। জানা গেছে, একটি ডাকাতি মামলায় রিমান্ডে নেয়া আসামীকে নির্যাতনের ভয় ভীতি দেখিয়ে তার দুই সতীনকে পুলিশের উপ পরিদর্শক (এস আই) আতাউর রহমান এবং দুইজন সোর্স নজরুল ওরফে তোতলা নজরুল ও শুভ কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে পুলিশের দুই সোর্স নজরুল ও শুভকে। শুক্রবার ২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত কমিটিটি গঠন করা হয় এবং দুই সোর্সকে আটক করা হয়।
এছাড়া বিকালে আইনজীবীর চেম্বার থেকে ধর্ষিতা দুই সতীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আরও জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ডাকাতি মামলায় মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার এক ব্যক্তিকে গত ২৯ আগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে মামলায় গ্রেফতারকৃত ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন নিশ্চিত করেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সোহেল আলম। রিমান্ড আবেদনের পর আসামীকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
ওইদিন রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের এস আই আতাউর রহমানের সোর্স হিসেবে কাজ করা নজরুল ইসলাম ও শুভ রিমান্ডের আসামী ইকবালের দুই স্ত্রীকে ফোন করে এস আই আতাউরের জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে। কথা মোতাবেক রাত সাড়ে ১০টায় রিমান্ডে থাকা ব্যক্তির দুইজন স্ত্রী একসঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অদূরে দুইজন সোর্স নজরুল ও শুভের সঙ্গে দেখা করে। তারা নজরুলের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় দুই সতীনকে। দেন দরবারের এক পর্যায়ে ৬ হাজার টাকাও দেন তারা। কিন্তু বাকি টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় উসুল স্বরূপ এক পর্যায়ে শুভ ইকবালের ছোট স্ত্রী ও নজরুল বড় স্ত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর প্রস্তুাব দেয়। রাজী না হওয়ায় বাকি ১৯ হাজার টাকা দিতে না পারলে মারধর করা হবে ভয় দেখিয়ে দুটি পৃথক কক্ষে গিয়ে ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ১২টায় আসে এস আই আতাউর। তখন সে স্বাভাবিক ছিল না। সে ছোট স্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরে গভীর রাত ২টার দিকে রিমান্ডে থাকা আসামীকে দুই স্ত্রীর সামনে নিয়ে আসে এবং প্রমাণ করে কোন ধরনের মারধর করা হয় নাই। তবে এর আগেই শর্ত দিয়েছিল যাতে স্বামীর সামনে স্ত্রীরা কিছু না বলে। জানালে ও বললে আরো মামলা ঠুকে দিবে হুমকিও দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। তখন ধর্ষণের শিকার দুই স্ত্রীকেও আদালত পাড়ায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তখন দুইজনকেই বেশ অসুস্থ্য ও হাটাচলা করতে কষ্ট পোহাচ্ছে দেখা গেছে। তারা ওইসময়ে আইনজীবী মজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সুপারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিলের কাগজপত্র তৈরী করে রাখলেও পুলিশের ভয়ে জমা দিতে সাহস পাননি। পরে বিকেল ৬টায় দুই সতীনকে তাদের শ্বশুর নিয়ে যায় শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগ। তবে সেখানকার ডাক্তার ইমন মামলা ও জিডি ছাড়া এ ধরনের কোন ঘটনায় পরীক্ষা করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
তবে পুরো অভিযোগ প্রসঙ্গে এস আই আতাউর রহমান জানান, ঘটনাটি মিথ্যে। আমার সঙ্গে কারো কোন কথা কিংবা লেনদেনের আলাপ হয়নি। তবে নজরুল ও শুভ নামের যে দুইজন সোর্স আছে তারা আমার সহ আরো পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে সোর্স হিসেবে কাজ করে।
এদিকে শুক্রবার এ ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত দুই সোর্স নজরুল ও শুভকে।
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন সহকারী পুলিশ সুপার ক অঞ্চল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মামুনুর রশিদ মন্ডল।
সহকারী পুলিশ সুপার ক অঞ্চল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানান, এ ঘটনাটির তদন্ত প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে। পরবর্তিতে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে আইনজীবি মজিবুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ নতুন কোর্ট ভবনের পাশে চাঁনমারীস্থ তার চেম্বারে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার (ওসি) তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলাম ও এসআই ওমর ফারুক। পরে তারা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আইনজীবি মজিবুর রহমানের চেম্বার থেকে ইকবাল হোসেনের দুই স্ত্রীকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসেন।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে তার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে থানায় নিয়মিত মামলা হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মিজানুর রহমান জানান, পুলিশের উপ পরিদর্শক (এস আই) আতাউর রহমান মাত্র অল্প সময় ধরে এই থানায় এসেছে। ওনি এইধরনের কাজে জড়িত কিনা তা সঠিক বলতে পারছি না তাছাড়া স্ব-চোখে না দেখে কোন মন্তব্য করাও ঠিক নয়। আল্লাহ ভালো জানে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সোর্স নজরুল ওরফে তোতলা নজরুল ও শুভ এখন থানা হাজতে আটক রয়েছে। তবে কি কারনে তাদেরকে আটক রাখা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।