নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ঢাকা ডেস্ক ) : ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতা আরো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এই সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সোমবার ৭ নভেম্বর মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে কম শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো বাড়বে। এখন ৩ পার্বত্য জেলার ৪টিসহ দেশের আরো ৬৪ উপজেলা এই কর্মসূচির আওতায় আসবে। দারিদ্র্য প্রবণ বলে চিহ্নিত ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রামের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ে অর্থাত্ তিন ধাপে সম্প্রসারিত হবে। এই কর্মসূচিতে খাগড়াছড়ির ২ এবং বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির একটি করে মোট ৪ পার্বত্য উপজেলা রয়েছে।
সম্প্রসারিত কর্মসূচির আওতায় আগামী বছরের মে মাস থেকে শিক্ষিত বেকার যুবকদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী দৈনিক ১শত টাকা করে ভাতা পাবেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে দুই বছরের জন্য বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে দৈনিক ২শত টাকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। এই কর্মসূচির জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ৫৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার মধ্যে বর্তমান ২১৫ কোটি টাকা রয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবশিষ্ট ৩৩০ কোটি টাকাও সরকারই দেবে।
জানা যায়, এই কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও বরগুনা জেলার ১৯ উপজেলার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৫৬ হাজার ৮০১ জন যুবকের মধ্যে ৫৬ হাজার ৫৪ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে ৩৭ উপজেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ১১৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ জনের দৈনিক হাজিরাতে ২ বছরের জন্য বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে চাকরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক বাড়ির জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টির নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ৬ মার্চ কুড়িগ্রামে এক অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সূচনা করেন। এদিকে জাতীয় জৈব কৃষি নীতি, ২০১৬ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আমাদের জাতীয় কৃষি নীতি, ২০১৩ রয়েছে। এটার আওতায় জৈব কৃষির জন্য এ নীতিটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কয়েকটি অনুচ্ছেদের ছোট একটি নীতি।
পৃথিবীর ১৭২টি দেশে জৈব চাষাবাদ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরমধ্যে ৭৮টি দেশ নিজ নিজ জৈব নীতি প্রবর্তন করেছে। তাদের অনুসরণে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত ও ভুটান এটা করে ফেলেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ও নেপালে প্রণয়নের কাজ চলছে।
এই নীতির ফলে রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারে ভূমির যে অবক্ষয় হয়, ঊর্বরতা হ্রাস পায় তাকে জৈব ও সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে কমপেনসেট (কমানো) করা যায় তা নিশ্চিত করা যাবে। মাটির গুণাগুন ও কৃষির পরিবেশ এগুলো মধ্যে যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে আঙ্গিকে কাজ করার জন্য কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নীতিতে।
বিদ্যুত্ ভাগাভাগির সমঝোতা স্মারক
মন্ত্রিসভা বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গ্রিড কানেকশনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। ‘বে অব বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেকদিন ধরে এটা কার্যকরের জন্য আলাপ হচ্ছে। বিভিন্ন সেক্টরে কো-অপারেশন (সহযোগিতা), এখন বিদ্যুত্ সেক্টরে কিভাবে সহযোগিতা করতে করা হবে তা গ্রিড (বিদ্যুত্ বিতরণ ব্যবস্থা) ইন্টারকানেকশনের (এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সংযোগ) জন্য এই এমওইউটা তৈরি করা হয়েছে। বলতে গেলে সদস্যভুক্ত সব দেশই এই এমওইউটার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সংশোধন অনুমোদন
এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৬ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সম্পর্ক রয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার থেকেই ব্যাংকটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই আইনে (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন) একটি সমস্যা আছে যে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের বাধা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনের ৩৯ ধারার উপধারা-১ এর (ক) এ পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে যেখানে ৩০ জুন ছিল সেটা উঠে গিয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে উক্ত প্রকল্পগুলো ব্যাংকে চলে আসবে।
বিদ্যালয়ে থাকবে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি মূলত ইংরেজি আইনের বাংলা অনুবাদ। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশ ছিল, যেহেতু এটা সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ এজন্য এটিকে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সামান্য পরিবর্তন সহকারে নতুন আইন হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যালয়ের অর্থে আগে মাদ্রাসা ব্যতীত শব্দটি ছিল। এখন তা উঠিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা কোনো আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বা স্বীকৃত হোক বা না হোক যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়। পাঠ্যপুস্তকের সংজ্ঞাটি আরো পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তক অর্থ প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনো শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক অষ্টম শ্রেণি ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনগুলো সংশোধন আনা হচ্ছে।