নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নানা কোন্দল ও বিভক্তিতে ভাটা পড়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে। অনেকই দলটিকে ব্যবহার করে নেতা থেকে জনপ্রতিনিধি বুনে গেলেও এখন আর খুব একটা দেখা যায় না দলীয় কর্মসূচীতে। টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কাছে যেন অসহায় বিএনপি। নিজ দলকে চাঙ্গা না করে বিরোধী দলের চাটুকারিতায় ব্যস্ত তারা। দলের ক্রান্তিকালে এ জেলায় ওই সকল নেতাকর্মীদের ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- বিএনপির সমর্থনে জনপ্রতিনিধি হলেও প্রকৃতপক্ষে আদৌ কি দলীয় নেতাকর্মী নাকি আওয়ামীলীগের তারা ?
যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে, বন্দর উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। যিনি পদে থাকলেও মাঠ পর্যায়ের দলীয় কর্মসূচীতে কোন সক্রিয় নেই তার। তাছাড়া বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগের নেতা এবং ক্ষমতাসীনদের সাথে আতাঁত করে চলতে দেখা যায়। এর কারণে মুকুলের প্রতি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশও রয়েছে। এদিকে দলীয় কর্মসূচীতে মুকুলের সক্রিয় না থাকায় বিভিন্ন সময়ে তাকে নিয়ে তার দলীয় নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছিলো। তাছাড়া অভিযোগ উঠেছিল, গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ারও।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী মো. মনিরুল আলম সেন্টু। বিএনপির সমর্থনেই প্রথমে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি তার এলাকায় সেন্টু চেয়ারম্যান নামে পরিচিত। কাগজে কলমে ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি থাকলেও মাঠ পর্যায়ের দলীয় কর্মসূচীতে কোন সক্রিয় নেই তার। এর আগে ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চবটিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের এক নির্বাচনী জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা এর পরই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করাও হয়েছিলো। এদিকে মনিরুল আলম সেন্টু কে এ সময় তার দলীয় নেতারা বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা করতেও শোনা গিয়েছে। বর্তমানে শামীম ওসমানের আশির্বাদে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে বেশ সখ্যতা এবং আসা যাওয়াও রয়েছে তার।
মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বিএনপির রাজনীতি করেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহের যেন শেষ নেই। অভিযোগ রয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছিল শকু। তাছাড়া ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলা ঘটনায় অভিযুক্ত হলেও বেশ ভালোই আছেন শকু। দলীয় কর্মসূচীতে না দেখা গেলেও বিএনপির সমর্থনে কাউন্সিলর হয়ে আওয়ামীলীগ পরিবারের লোকের সাথেই ফটোসেশনে করতে বেশী দেখা যায় তাকে।
জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বিএনপির সমর্থনে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদকে আকড়ে ধরে রাখতে এখন আওয়ামীলীগের নৌকার পালেই হাওয়া দেন তিনি। বিএনপির কোন কর্মসূচীতে না দেখা গেলেও আওয়ামীলীগের লোকের সাথেই যেন উঠাবসা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল প্রধান। দলীয় কোন কর্মসূচীতে নেই বললেই চলে। তাছাড়া সবশেষ নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে পা ছুঁয়ে সালাম করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপির এই নেতা। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের হাতে ফুল দিয়ে ও তার পা ছুঁয়ে সালাম করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ইসরাফিল প্রধান।
তাছাড়া বিভিন্ন সময়ই আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি নেতাদের সাথে ফটোসেশনে লক্ষ্য করা যায়, বিএনপি নেতা হান্নান সরকার, সুলতান মাহমুদ, জমশের ঝন্টু, এনায়েত হোসেন। যারা সকলেই এখন বিএনপির সর্মথনে নাসিক কাউন্সিলর।
এতে করে তৃণমূলের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, দলের পদ পদবী হাসিল হলেও বিএনপির ওইসব নামধারীরা কখনো দলের উপকারে আসেনি। দলকে ভর করে কেউ চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেম্বার হলেও দলীয় কর্মীকে তারা সব সময়ই অবমূল্যায়ীত করেছেন। তাছাড়া সরকারী দলের সাথে সম্পর্ক রেখে সমঝোতার রাজনীতি করার কারনেই শত শত নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হলেও গুটি কয়েক নেতার নামে কোন মামলাও হয়নি। যার মূল কারণ হিসেবে তারা মনে করেন বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিত থাকায় তারা নিজেদের গা ঢাকা দিয়ে রাখতেই এই পথ বেছে নিয়ে তারা সুবিধা লুটছেন। আর রাজপথে তাদের দেখা না গেলেও সরকারী দলের এমপিদের সাথে ঠিকই ফটোসেশন অব্যহত রেখেছেন তারা। আর তাই তৃণমূল আশংকা করছে, আবারো কি সংস্কারের পথে হাটছেন তারা। কেনই বা তাদের বহিস্কার না করে দলে ঝুলিয়ে রেখে বিএনপি দলে কলংক লেপন করা হচ্ছে? এ নিয়েও দলটির দায়িত্ববান নেতাদের নিশ্চুপ ভূমিকা দেখে প্রশ্ন তোলেছে তৃণমূল।