জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর আহবান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ জানুয়ারী বুধবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর)- এর ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্স অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দশতলা ভবন এবং ১০০০ আসনের শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের দশ তলা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে আমাদের শিক্ষার্থী সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য সচেষ্ট হবার জন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক সমাজকে আমি একটা কথা বলব জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে আমাদের শিক্ষার্থী ও সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে গণভবন থেকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রংপুর বিভাগের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে এই আহবান জানান।

 এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে প্রকল্প দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় তিনি বলেন, কোনমতেই যেন এখানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দানা বাঁধতে না পারে। কারণ রংপুর বিভাগে আমরা দেখেছি ২০১৩ সালে যে তান্ডব হয়েছে- মানুষ হত্যা করা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, গাছপালা কেটে ফেলা। ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট তারাই আবার জঙ্গির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বাসে, ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যা করেছে। আর সেই সাথে সাথে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নাই। আর কে ভালো কে মন্দ- সে বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এটা বিচারের দায়িত্ব মানুষকে আল্লাহ পাক দেন নাই। কাজেই মানুষকে খুন করে কোন ভালো কাজ হতে পারে বা মানুষকে খুন করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারে- সেটা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ এভাবে কেউ যে বেহেস্তে গেছে তা কেউ জানতে পারেনি। কাজেই এ ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আমাদের মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিপথে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এমনটি কর্মচারি সকলকে আহবান জানাবো- সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যেন আমরা বাংলাদেশটাকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরের ভাইস চ্যাঞ্চেলর অধ্যাপক একেএম নুরুন্নবি। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রংপুর বিভাগের সংসদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে স্থানীয় মসজিদের খতিবের পরিচালনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলটি যখন একনেক -এ আসে এটি ছিল ৬শ আসন বিশিষ্ট। যেটি আমি এক হাজার আসন বিশিষ্ট করে দেই। কারণ আমরা আশা করি, আমাদের ছাত্রী সংখ্যা আরো বাড়বে। সেই সাথে সাথে আমরা বিজ্ঞানের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেই, আর গবেষণাটা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার কোন বিকল্প নেই। যে কারণে আমরা এই গবেষণা ইনস্টিটিউট (ড. ওয়াজেদ) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। এই ইন্টান্যাশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, আমি আশা করি।

তিনি বলেন, রংপুর সবসময় একটি অবহেলিত জেলা ছিল। আমরা দেখেছি এখানে মঙ্গা চিরাচরিত বিষয় ছিল সব সময়। আমি বিভিন্ন সময়ে রংপুর গিয়েছি সেখানে সবসময় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সেখানে ত্রাণ নিয়ে যেতাম, লঙ্গরখানা খুলতাম, সেসময় সেখানকার সবসময় আমি ঘুরেছি। আমাদের যেটা লক্ষ্য ছিল, যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি আমরা চেষ্টা করেছি ঐ অঞ্চলের জনগণ কিভাবে একটু ভাল থাকতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই আমরা রংপুর বিভাগ ঘোষণা করি। কারণ একটি বিভাগ ঘোষণা করলে বিভাগীয় অবকাঠামো গড়ে উঠলে এলাকার অনেক উন্নতি হয়। সেই চিন্তা থেকেই রাজশাহী বিভাগকে দুই ভাগ করে রংপুরকে একটি আলাদা বিভাগ করে দেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার নামে একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম পায়রাবন্দে। সে এলাকায় বিশ্বদ্যিালয় করাটা একটু কঠিন। শিক্ষক পাওয়া, যোগাযোগ- সবকিছু মিলেই একটু কঠিন। আর যেহেতু নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করলাম তাই সেটা পরিবর্তন করে রংপুরেই আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেই। আর পায়রাবন্দে নানারকম প্রশিক্ষণের জন্য আমি একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দেই। যেখানে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, বিশেষ করে মেয়েদের বিভিন্ন ট্রেডে ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হবার পরই ইতোমধ্যেই সেখানে প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র হল, ছাত্রী হল, শিক্ষক ডরমেটরী, অফিসার্স ডরমেটরী, উপাচার্যের অফিস ও বাসভবন এবং লাইব্রেরী, কেন্দ্রিয় মসজিদ সববিছু ইতোমধ্যে করা হয়েছে। কিন্তু আস্তে আস্তে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষকরে ছাত্রী সংখ্যা এখন ছাত্রদের সমপরিমাণ। যে কারণে আমার নির্দেশনা দেয়া আছে নির্মণাধীন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী হল যেন করা হয়। আগে যেমন ছাত্রী হল কম করা হত।  আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। তিনি দীর্ঘকাল এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সংগ্রাম করেছেন। শোষিত-বঞ্চিত গৃহহীন মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বারবার কারা নির্যাতন সহ্য করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রসারে তাঁর সরকার পরিচালিত বৃত্তি, উপবৃত্তি, উচ্চশিক্ষায় আর্থিক সহায়তা প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই যেমন উন্নয়ন করতে পারে না তেমনি শিক্ষা ব্যতীত দারিদ্র্য বিমোচনও সম্ভব নয়।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত