বন্দর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে সকল প্রকার প্রচারণা। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার ৮মে ভোটাররা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাদের পছন্দের তিন জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন। তবে এবারের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় গতবারে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় অটো পাশে নির্বাচিতদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে।

বিশেষ করে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও গতবারে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়া অটো পাশ চেয়ারম্যান এম এ রশিদকে বিজয়ী করতেই দৌঁড়ঝাপ চলছে। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রতীক (দোয়াত-কলম) নিয়ে লড়ছেন। রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ থাকলেও ভোটের মাঠে বরাবরই দুর্বল তিনি। বিগত দিনে এম এ রশিদ ৩ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুইবারই পরাজিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনাভোটে প্রথমবারের মতো বন্দরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, এবার আর তিনি ফাঁকা মাঠ পাননি। তার সাথে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল প্রতিদ্বন্দ্বী করায় রশিদ শিবিরে দুশ্চিন্তা দেখা গেছে। একই সাথে জাতিয় পাির্ট দল থেকে বহিস্কৃত হলেও চেয়ারম্যান পদে স্থির রয়েছেঅপর প্রার্থী মাকসুদ হোসেন। যিনি এরআগে বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন। এরই মধ্যে এমএ রশীদের লোকজনের বিরুদ্ধে হুমকী এবং প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও তোলেছেন অপর দুই প্রার্থী। এছাড়াও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর এম এ রশিদ জনবিচ্ছিন্ন ছিলো বলেও স্থানীয় লোকদের ভাষ্য।

এ প্রসঙ্গে এম এ রশিদের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি প্রতিবারই ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান। গত দুইদিন ধরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা হলে তিনি কখনো জানান দলীয় মিটিংয়ে আছেন। কখনোবা নির্বাচন কমিশনারের মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। তবে এ নিয়ে যাচাই করা হলে তার কথার সাথে মিল পাওয়া যায়নি। এরআগে নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন এম এ রশিদ। তিনি বলেন, আমার বিগত সময়ের কাজ দেখে মানুষ আমাকে ভোট দেবে। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সব পর্যায়ের মানুষই আমার পাশে আছেন।

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বিনাভোটে বিজয়ী রশিদ চেয়ারম্যান পদে সরাসরি নির্বাচনে ভোটারদের কতটুকু সমর্থন আদায় করতে পারেন, এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে ৮ মে ভোটগ্রহণের ফলাফল ঘোষণার পর৷তবে, তার বিজয়ের পথটি সুগম নয় তা বাকি দুই প্রার্থীর জোর প্রচারণার দিকে নজর দিলে বোঝা যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

উপজেলায় একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেননি চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ রশিদ। সাবদি এবং চাঁনপুর এলাকার ভোটাররা জানান, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলছে এটা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। কিন্তু এম এ রশিদ সাহেব আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসেননি। তিনি ব্যস্ত রয়েছেন উপর মহলে দৌঁড়ঝাপ নিয়ে। তাছাড়া কয়েকটি উঠান বৈঠক এবং সভা করলেও সেখানে স্থানীয় এমপি দিয়ে শোডাউন করেছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্যান্য প্রার্থীরা যেভাবে শ্রম দিচ্ছেন সে তুলনায় এম এ রশিদ নীচের কোঠায়।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দর উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৪৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। সেই সময় ওসমান পরিবার-সমর্থিত প্রার্থী এম এ রশিদ মাত্র ৯ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। এর আগে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও মুকুলের কাছে হেরে দ্বিতীয় হয়েছিলেন রশিদ৷

ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে এ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। ভোটারদের মধ্যেও একধরনের উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দুই সংসদ সদস্যের সক্রিয়তাও আলোচনায় আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও। সবমিলিয়ে বন্দর উপজলা পরিষদ নির্বাচনের দিকেই চোখ সকলের।

মূলত, এই জেলায় পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। ষষ্ঠ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রথম ধাপে সদর ও বন্দর উপজেলার নাম ঘোষণা করা হলেও মামলা জটিলতায় সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। ফলে প্রথম ধাপে জেলায় কেবল বন্দর উপজেলা নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে সোনারগাঁ, রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। কিন্তু নানা কারণেই বন্দর উপজেলা নির্বাচনের দিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর দৃষ্টি। দুই ধাপের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য এই উপজেলার নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান যে চারজন লড়ছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। তার প্রতীক চিংড়ি মাছ। তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। এ ছাড়া ভোটের মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম)। জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে লড়াই করছেন। তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভও হেলিকপ্টার প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। যদিও শুভ তার পিতার পক্ষেই প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), আলমগীর হোসেন (মাইক) ও মোশাঈদ রহমান (তালা)।

সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন (ফুটবল) এবং আরেকজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (কলস)।

এদিকে, বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদিকে যখন ভোটাররা অনেকটা ভোটকেন্দ্রবিমুখ, তাতে এ উপজেলা নির্বাচনের সমাপ্তির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় ধাপে আরও তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের আস্থা তৈরি করবে। যদিও, স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তারা বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্দর উপজেলার ৩৫টি কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু।

উল্লেখ্য, বন্দর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৫০০ জন; নারী ভোটার ৬৪ হাজার ৬২ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন। সর্বমোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৫৪টি।

add-content

আরও খবর

পঠিত