সোনারগাঁ আওয়ামীলীগে বিতর্ক তকমা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নিবার্চনের বাকি আর কয়েকমাস। এরইমধ্যে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে নেতারা। উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগও করেছেন নিজ দলের নেতাকর্মী। তারা কমিটি বাতিলের দাবিতে ইতমধ্যে জানাচ্ছেন প্রতিবাদ। যদিও এসব অপপ্রচার বলেই এক সংবাদ সম্মেলনে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তবে দিন যতই যাচ্ছে ততই সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক তকমা।

এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে ২২ জনই নতুন মুখ। যারা কখনও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদ পদবিতে ছিলেন না। এমনকি কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী, বিতর্কিত ব্যক্তি, মামলার আসামী ও মাদকসেবীদের স্থান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ ওমর। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেছেন, ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। যারা নৌকা না পেলেই নৌকা ডুবিয়েছেন তাদেরকেও রাখা হয়েছে। ৭১ বিশিষ্ট কমিটিতে একই ইউনিয়নের ৫৪জনকে রাখা হয়েছে। আর এতে পরিবারতন্ত্র স্পষ্ট। গত ২৩ জুন শুক্রবার বিকেলে দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ ওমর এসব কথা বলেন।

সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ। যেখানে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে কমিটির খসড়া প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অবমুল্যায়নের শিকার হয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূর জাহান। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার থেকে এক এগারোর মত কঠিন সময়েও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে যিনি অনেক নির্যাতন ও ত্যাগ শিকার করলেও তিনি অবমূল্যায়িত।

নিজের দু:খ শেয়ার করে অ্যাডভোকেট নূর জাহান তার ব্যবহৃত ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, আমি একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সংসারের বড় মেয়ে। প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে পা দিতেই পরিবারের সিদ্ধান্তে এক সরকারী চাকুরীজীবির সাথে বিয়ে হয়ে যায়। অতিকষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। তৎকালীন সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ষোল সিদ্ধান্ত শিখাইতাম নারীদেরকে। সেই থেকে লিডারশিপ মনোভাব বুঝি। যখন কলেজে পা রাখি রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবাসি, লালন করি, বিশ্বাস করি। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে কাজ করি। সন্তানাদি লালন পালন, পড়াশোনা, রাজনীতি সমান তালে চালিয়ে যাই। পড়াশোনা শেষ করে আইনজীবী হিসাবে কোর্টে জয়েন করি। ২০০১ সালের জামায়াত, বিএনপি বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চা দুটি কত বেলা যে না খাইয়া রইছে তার হিসাব নাই। তখন সোনারগাঁয়ে আমি কোন মহিলা পাইনাই, আজকে কমিটিতে নাম দেবার বেলায় সবার সম্পাদকীয় পদ আমার বেলায় নাই। আমি আমার সম্মানিত সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকের নিকট অনুরোধ করেছিলাম যে, আমার বয়স হয়ে গেছে, আমাকে সহ- সভাপতি দিয়েন, আমাকে অসম্মান কইরেন না, আমার পড়ে যে মহিলারা আসছে তাদের নিচে আমাকে রাইখেন না। উনাদের উত্তর আমি মহিলালীগে আছি। তাহলে আমার প্রশ্ন যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, কিভাবে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পায়? আমার অপরাধ কি? আমি নৌকা ছাড়া কোথায়ও যেতে পারি নাই, তাল মিলাতে পারি নাই, যে নারী অন্য দলের কাছে গিয়া আপনাদের বদনাম করে সুবিধা নিয়ে ধনী হয়েছে। তাকে আপনারা বড় পদে দেন। আমার মামা চাচা নাই, আমার খুটার জোর নাই। আমি হায়নার মত চলতে পারি না, এটাই আমার বড় অপরাধ? আমার বাবা মা নাই, আমার দুঃখ শোনারও কেউ নাই। আল্লাহ আপনি আমার সহায় হোন। ১৯৯৮ সাল থেকে কোর্টে এক সাথে আছি। আমি সেই থেকে সম্মানিত সভাপতি সাহেবকে যত হাজার বার বাবা, বাবা করেছি, যদি এত হাজার বার তবজি জবতাম তাহলে আল্লাহও ডাকে সাড়া দিতো।

এখানেই শেষ নয়, প্রস্তাবিত কমিটি থেকে বিতর্কিতদের অপসারণের দাবীতে মানববন্ধনও করেছে তৃনমূল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। গত ১৫ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সোনারগাঁ উপজেলা তৃনমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। এ সময় উস্থিত বক্তারা, আরিফ মাসুদ বাবু, শহিদুল সরকার, জহির চেয়ারম্যান, ইউসুফ দেওয়ান, সাইদুর রহমান মোল্লা, আলী হায়দার, মেস্তাফিজুর রহমান মাসুম, জাকির হোসেন, আতাউর রহমান আক্তার, লায়ন বাবুল, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, সামসুল আলম, মারুফুর রহমান ঝলক, মাহবুব সরকার, সানজিন সরকার, মাহবুবুর রহমান লিটন, মোশারফ মেম্বার, কবির হোসেন, এড. আমির, এসএম জাহাঙ্গীর, খাইরুল আলম ও নুরে আলম খানের অপসারনের দাবী জানান। সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আবু রায়হান এর নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সবুজ, সুমন, রাসেল, রফিক, পলাশসহ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৫ বছর পর ২০২২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে ৯ মাস পর গত ৫ মে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। যা নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে।

add-content

আরও খবর

পঠিত