প্রশাসন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে : আইভী

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ১১ বছর হয়ে গেল আমরা ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করছি কিন্তু বিচার আমরা পাচ্ছি না। কেন বিচার পাচ্ছি না তা বাংলাদেশের সকলেই জানে। বিচার চাই, চাচ্ছি, এই কথা বলতে আর ভালো লাগে না। শিশু, কিশোর, নারী বা যেকোন হত্যাকাণ্ডের বিচার করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রই সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে শহরের দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১ বছর পূর্তিতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

কিন্তু এই দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে বহু বছর লেগেছে। এমন অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বিচারগুলো সম্পন্ন করেছেন। এই কারণে বাংলার মানুষের কাছে তার প্রতি আস্থা বেড়ে গিয়েছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। এই কারণে আমিও নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে ত্বকী হত্যার বিচার চাই। যতদিন বিচার না হবে ততদিন এই বিচার আমরা চেয়েই যাবো। এইখানে কোন অবস্থাতে কোন অবস্থাতে, কোনভাবে কারও সাথে আপোস করার সুযোগ নাই। এই বিচার অবশ্যই হবে বলেন আইভী।

তিনি আরও বলেন, ১১ বছর আগে যে বাচ্চার বয়স ছিল ছয় বা সাত বছর, তার বয়স এখন সতেরো বা আঠারো। বাংলাদেশে এমন কোন প্রান্ত নাই যেখানে ত্বকীকে কেউ না চিনে, ত্বকীর নামটা না জানে। আজকে যারা সতেরো বা আঠারো বছর বয়সী তারা দুই-চাইর বছর পর একত্রিত হয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে গর্জন দিয়ে বলবে, ত্বকীর ভাইয়ার হত্যার বিচার আমরা চাই। এইটা তারা চাইতেই পারে, এইটাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা চাই না, এইরকম কারও বুকের ধন কেড়ে নিবে আর লাশটা শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠবে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সিটি মেয়র।

যখনই ত্বকীর কথা মনে পড়ে তখনই চোখের সামনে আমার ছেলের চেহারা ভেসে ওঠে। তখন কোন অবস্থাতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারি না। আর তখন নিজেকে খুবই অপরাধী আর অসহায় মনে হয়। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাইতে পারি না। আমার চোখের সামনে ঘাতক ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু বলতে পারছি না। তখন অসম্ভব অসহায় লাগে এই নারায়ণগঞ্জ শহরে। প্রত্যেক মায়ের ভেতরে একই অনুভূতি। সকলের কাছেই একই প্রশ্ন কেন এই বিচার হবে না। এই কেন এর উত্তর খুঁজে পাই না, আর খুঁজে পেলেও ওই উত্তর মানতে ইচ্ছা করে না কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আইভী।

তিনি বলেন, খুনিরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের বিচার রাষ্ট্রের কাছেই দাবি করবো। আমার তো উপায় নাই রাষ্ট্র আর প্রশাসন ছাড়া। নিজের হাতে তো আইন তুলে নিতে পারি না। রাষ্ট্রের কাছে বলবো, আপনারা ত্বকী হত্যার বিচার করুন। আপনাদের কাছে সকল এভিডেন্স আছে, সবধরনের তথ্য আছে। কখন, কোথায়, কীভাবে, কী কারণে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে; সবকিছুর প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে। আমি জানি না, কীভাবে এই বিচার হবে কিন্তু এই বিচার হবে, হতেই হবে। প্রশাসন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাসিক মেয়র।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে নিষেধ করবো খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা না দিতে অনুরোধ করি। কিন্তু কে কার কথা শোনে? যে যত বেশি অপরাধী তারাই সব জায়গায় নেতৃত্বে। নারায়ণগঞ্জ দেশের ৬৪ জেলার বাইরেই আছে মনে হয়। অনেকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ তো এখন শান্ত। হ্যা শান্ত, কারণ ত্বকী মঞ্চ আজকে সিরিয়াসলি প্রতিবাদ করছে বলে অনেক জায়গায় খুন হচ্ছে না। ১১ বছর যাবৎ একটি মঞ্চ প্রতি মাসের ৮ তারিখ হত্যার বিচার চাচ্ছে। সেখানে তো অপরাধী যত বড়ই প্রভাবশালী হোক, একটু তো বুক কাঁপে। তারপরও কী হত্যাকাণ্ড হয়নি? হচ্ছে, হয়তো আপনারা জানেন না। অনেকে সাহস করে সেইসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

এইখানে আরও হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সবগুলো হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা চাই। একদিন এইসব হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হবে যোগ করেন আইভী।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি লেখক ও গবেষক মফিদুল হক, শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা, শিল্পী অশোক কর্মকার, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম ও সদস্যসচিব হালিম আজাদ।

সমাবেশ শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সেরা ২৫ জন শিশুর মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়।

add-content

আরও খবর

পঠিত