উপসচিব গাউছুল আজমের ইভটিজিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ :     ইভটিজিং বলতে কি বুঝি  ?

ইভটিজিং বলতে সাধারণত কোন নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজ কর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, তার নাম ধরে ডাকা এবং চিৎকার করা, বিকৃত নামে ডাকা, কোন কিছু ছুঁড়ে দেয়া, ব্যক্তিতে লাগে এমন মন্তব্য করা, যোগ্যতা নিয়ে টিটকারী করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া, উদ্দেশ্যেমূলক ভাবে পিছু নেয়া, অশ্লীল ভাবে প্রেম নিবেদন করা, উদ্দেশ্যেমূলক ভাবে গান, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথ রোধ করে দাড়ানো, প্রেমে সাঁড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে।

দন্ডবিধি আইন :

১৮৬০ এর ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং সম্পর্কে বলা হয়েছে যদি কোন কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাহাতে শুনিতে পায় এমন ভাবে কোন কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা সে নারী যাহাতে দেখিতে পায় এমন ভাবে কোন অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্তু প্রদর্শন করে, কিংবা অনুরুপ নারীর গোপনীয়তা অনাধিকার লঙ্ঘন করে, তাহা হইল সে ব্যক্তি এক (১) বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ডে কিংবা অর্থদন্ডে কিংবা উভয় দন্ডেই দন্ডিত হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ এর ৭৬ ধারায় ইভটিজিং বা উত্যক্ততা বিষয়ে বলা হয়েছে যদি কেউ কোন রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান হতে দৃষ্টি গোচরে সেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজ  দেহ এমন ভাবে প্রদর্শন করে যা কোন গৃহ বা দালানের ভিতরে থেকে হোক বা না হোক কোন মহিলা দেখতে পায় বা সেচ্ছায় কোন রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোন নারীকে পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোন রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্যস্থানে কোন অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোন মহিলাকে অপমান বা বিরক্ত করে তবে সেই ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারায় -সর্ব সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃংখল আচরণের শাস্তি হিসেবে ৩ মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদন্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে-।

১৮৬০ সনের দন্ডবিধি আইনের ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপায় বা সে তদ্বারা তার শালীনতা নষ্ট করতে পারে জেনেও তাকে আক্রমন করে বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে তাহলে সে ব্যক্তি ২ বৎসর পর্যন্ত যেন কোন বর্ণনার কারাদন্ডে বা জরিমানাদন্ডে বা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (খ) ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর বা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বৎসর কিন্তু অন্যূন ৫ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্তিত হইবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ ধারা অনুযায়ী যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং উহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হইবেন। ধর্ষণ পরবর্তী নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম করাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং উহার অতিরিক্ত অন্যূন ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন।

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কার্যও করে অথবা কোন প্রকাশ্য স্থানে বা তার সন্নিকটে কোন অশ্লীল গান, গাঁথা, সংগীত বা পদাবলী গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে তাহলে সে ব্যক্তি ৩ মাস পর্যন্ত যে কোন ধরনের কারাদন্ডে বা জরিমানাদন্ডে বা উভয়প্রকার দন্ডে দন্ডিত হবে।

কারা ইভটিজিং এর শিকার হয় ?

কিশোরী মেয়ে, শিশু, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিকরা, বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নারী কর্মচারী, কর্মকর্তা, আইনজীবি, সাংবাদিক ডাক্তারসহ সকল স্তরের নারীরা। ইদানিং পাবলিক পরিবহনেও নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন।

ইভটিজিং বন্ধে কারা ভূমিকা রাখতে পারে :

  • পরিবারের সদস্যগণ ও একে অপরকে সচেতন করতে পারেন।
    • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষিকাগণ।
    • কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীগণ।
    • রাস্তাঘাটে চলাচলকারী সাধারণ জনগণ।
    • আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনী।
    • বিজ্ঞ আদালত।
    • ভ্রাম্যমান আদালত।
    • জনপ্রতিনিধিগণ।
    • সাংবাদিকসহ সকল সচেতন মানুষ।

ইভটিজিং প্রতিরোধ  :

১। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ক্লাসরুমে ইভটিজিং সম্পর্কে আলোচনা করা এবং নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা।
৩। গণমাধ্যমে ইভটিজিং উৎসাহিত হয় এ ধরনের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন, নাটক, কঠোর ভাবে প্রচার না করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪। আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেতন ও কার্যকর করা।
৫। ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটলে ভিকটিম এর পাশে সকলকে দাড়ানো।
৬। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।

ইভটিজিং এর শিকার হলে কি করবেন ?

ইভটিজিং এর শিকার হলে সাথে সাথে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ডায়াল করলে পুলিশি সহয়তা পাবেন। আপনার আশে-পাশের র‌্যাব ব্যাটালিয়নে জানাতে পারেন। উপজেলা পার্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইন-চার্জ বরাবর লিখিত ভাবে এবং স্ব¦শরীরে হাজির হয়ে লিখিত বা মৌখিক ভাবে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে অবহিত করতে পারেন। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণকেও জানাতে পারেন। ইংরেজিতে টাইপ করুন -রির্পোট টু র‌্যাব- এই এপস এ জানাতে পারেন।

আশা করি ইভটিজিং এর প্রতিকার পাবেন। আসুন সবাই ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমাদের কন্যা, জায়া ও জননীদের পথ চলা নিরাপদ করায় সবাই এগিয়ে আসি।

লেখক- মো: গাউছুল আজম
উপসচিব,
বিসিএস (প্রশাসন),
২২তম ব্যাচ।

add-content

আরও খবর

পঠিত