নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : অবশেষে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে লাইফ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগীদের কাছ থেকে আয়া, সিস্টার কিংবা স্টাফদের কাউকেই কোন বকশিস না দেয়ার জন্য হাসপাতালে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা নোটিশ। এতে করে স্বস্তি মিলেছে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনসহ এ প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা সকল সাধারণ রোগীদের।
এরআগে গত বুধবার (৮ সেপ্টম্বর) অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ নিউজ পোর্টালে -নারায়ণগঞ্জে হাসপাতালে আয়াদের বকশিস বানিজ্যে অতিষ্ট রোগী ও স্বজন- এ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর ব্যপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই অভিযোগ তোলে বলেন, শুধু লাইফ জেনারেলই নয় অধিকাংশ বেসরকারী ক্লিনিকে একই অবস্থা। অপারেশন সহ বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা নিতে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে চুক্তিভিত্তিক ভর্তি হলেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর কতিপয়রা পরবর্তিতে রোগীদের প্রাপ্তি সেবা থেকে বঞ্চিত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরা চিকিৎসা সেবার নামে মূলত রোগীদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনসাধারণর সাথে ব্যবসায়ীক প্রতারণা করে আসছে। আর এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ রোগীদের। তবে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা সিভিল সার্জন বিষয়টি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করলে এর সেবার মান বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শহরের লাইফ জেনারেল হাসপাতালে উঠার সময় সিড়ির পাশে এবং প্রবেশ মুখে লক্ষ করা যায় নিষেধাজ্ঞা নোটিশ। সেখানে লিখা রয়েছে- কোন রুগী অত্র ক্লিনিকের কোন সিস্টার বুয়া বা অন্য কোন স্টাফকে কোন ধরনের বখশিস প্রদান করবেন না।-আদেশক্রমে, কর্তৃপক্ষ-লাইফ জেনারেল হাসপাতাল।
আর এমন নোটিশ লাগানোর পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি অনেকেরই আবার ইতিবাচক ভাবনা কাজ করেছে। নোটিশ লাগানো দেখে কেউ কেউ বাইরে দাড়িয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে অভিনন্দন। তবে ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি তোলে ধরে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং জনস্বার্থের জন্য প্রতিবেদন প্রকাশে গণমাধ্যমটিকেও সাধুবাদ জানিয়েছে নগরবাসী। তাছাড়া শহরের প্রতিটি হাসপাতালে সুনজর রাখার জন্য সকল গণমাধ্যমকে অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, এরআগে অভিযোগ উঠেছিল, শহরের লাইফ জেনারেল হাসপাতালে বাচ্চা প্রসূতির জন্য ভর্তি হয়েছিলেন সালমা (ছদ্মনাম)। অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ঔষধও দিয়েছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই রোগীর ব্যাথা ও অস্বস্তিকর লাগলে চিকিৎসককে জানাতে নার্স কিংবা আয়াদের সহযোগীতা চাইতেন রোগী ও স্বজনরা। তবে এতে অতিষ্ট বোধ করতেন কর্তব্যরত নার্স কিংবা আয়ারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভুক্তভোগী রোগী জানায়, ঔষধ চাইলে নার্সরা অন্য রোগীদের কাছ থেকে নিয়ে দিতো। বাচ্চা ডেলিভারী হওয়ার পর থেকে আয়া টাকা’র জন্য বারবার ঘুরতো। দিতে দেরী করেছে বলে স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। আর পরিচ্ছন্ন থেকে যেকোন সহযোগীতায় অবহেলা করতো।
রোগীর স্বজনরা আরো জানায়, শহরের জাকির সুপার মার্কেট ভবনের ২য় তলায় অবস্থিত ওই হাসপাতালটিতে গত মাসের শেষদিকে বাচ্চা প্রসবের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। সেখানে ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে কেবিন, ঔষধসহ সবধরণের সেবা পাবেন রোগী। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের পরে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে থাকতে দেয়। আর এরপর থেকেই আয়াদের বকশিস বাবদ টাকা’র জন্য বারবার রোগী ও স্বজনদের চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে নার্সদের সাথেও ঝগড়া হয়। যা গিয়ে তুই তুইকার অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। এমন আচরণের পর বাধ্য হয়েই বকশিস দিয়ে পরেরদিন রিলিজ হয়ে বাসায় চলে যেতে বাধ্য হয় রোগীর স্বজনরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওইসময় লাইফ জেনারেল হাসপাতালের একজন কর্ণধার এবং চিকিৎসক ফাতেমা শিরিন জানান, আমরা আসলে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। নার্স-আয়াদের এসব অভিযোগ আমরা শুনি। কিন্তু রোগী যদি সাহস করে আমাদেরকে জানায় তাহলে আমরা কিছু করতে পারি। আর তাছাড়া হাসপাতালে নার্স-আয়ারা আমাদের সামনে তো আর করে না। তাই আমরা কিছু বলতেও পারিনা। তবে যেহেতু জানিয়েছেন অবশ্যই তারা যেন খারাপ ব্যবহার না করে এবং বকশিসের জন্য কোনরকম চেষ্টা না করে তা আমরা দেখবো।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে হাসপাতালের মালিক মো. খোকনের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিল প্রতিবেদক। তবে তিনি ছিলেন না। পরবর্তিতে ডা. ফাতেমা শিরিনের কাছে মালিক মো. খোকনের ব্যবহৃত মুঠোফোনের নাম্বার চাইলে তিনি বলেন, আর কাউকে জানানো লাগবেনা। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।