নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : চলছে ৭দিন ব্যাপী কঠোর লকডাউন। আজ চলছে লকডাউনের পঞ্চম দিন। করোনা সংক্রমন রোধে এবার প্রথম দিন থেকেই পুলিশ এর পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্য। সড়কের বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। খেয়াঘাট গুলোতেও ছিল জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর কঠোর নজরদারী।
তবে কে শুনে কার কথা ! জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া নিষেধ থাকলেও কিছু মানুষ তা মানতে নারাজ। তাই এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে খেয়াঘাট পার হচ্ছে তাও সাথে একটি গিটার নিয়ে। অর্থাৎ নদীর তীরে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে, গান গাইবে, এটাই ছিল তাদের যৌক্তিক জবাব। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনা সদস্য এমন বাস্তবতায় হতভাগ হলেও বুঝানোর চেষ্টা করে বাড়ি ফিরিয়ে দেন।
যদিও উপস্থিত অনেকেই আবার মন্তব্য করছিলেন- কেন তাদের কান ধরে উঠবস এর মত হলেও কোন রকম শাস্তি না দিয়ে এভাবেই ছেড়ে দেয়া হল ! কিন্তু ওইখানেও যে প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন। বলা তো যায় না, সেই মন্তব্য থেকে কখন কে আবার মানবিক হয়ে উঠে। কোন গণমাধ্যম কিংবা কেউ আবার সেটাকে ভাইরাল করে ভিন্নমত প্রকাশে মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলে দায়ী করে দেয়। এটা ছিল লকডাউনের প্রথম দিনে হাজিগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়াঘাটের চিত্র।
একই অবস্থা হার মানায় দ্বিতীয় দিনকে ! স্থান বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাট। বেলা ২টা থেকে সাড়ে ৪টা। গত ২রা জুলাই শুক্রবার ছুটির দিন হলেও বাহিরে বের হওয়া বেশীর ভাগ মানুষই বলছে অফিসে যাবে, কারখানায় যাবে। আর সে সুবাদে প্রশাসনেরও ছাড় দিতে হচ্ছে। এদিকে ইচ্ছে হয়েছে বিরিয়ানী খাবে তাই এক যুবক নদী পার হয়ে শহরে এসেছে। আবার কেউ কেউ অযুহাত দিচ্ছে বাজার করতে নদী পার হয়েছে। আলু নাই, পিয়াজ নাই, ওইখানে দাম বেশী। সরকার কিনে দিবে ? অথচ বন্দর-নবীগঞ্জ এলাকা সহ বিভিন্নস্থানেই কাঁচাবাজার সহ বিভিন্ন বাজার রয়েছে। তবে দাম যদি বেশীও হয়, ঘাট পার হয়ে শহরে আসা যাওয়ায় যে খরচ হবে তাতে কি, ওই ব্যক্তি আসলেই লাভবান হবে ? এমন প্রশ্নের উত্তরেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বুঝিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকজনকে করেছেন জরিমানাও।
এদিকে মাঝিদের ট্রলার পল্টুনে আসলেই যেন উঠা-নামার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। মাঝিরা চিৎকার করেও কোন কথা মানাতে পারে না মানুষকে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্কাউট ও রেডক্রিসেন্ট এর স্বেচ্ছাসেবীকর্মীরাও হিমিশিম খায় সামাল দিতে। এমতাবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট এর অভিযানে যখন ট্রলারের যাত্রিদের উঠিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ১৫ জনকে উঠতে দেয়া হয়। তখন এক মাঝি ক্ষোভ নিয়েই বলেন, যাত্রী গো এতবার না করি শুনেই না। পাবলিক বড়ই ধ্যাতা !
৩ই জুলাই শনিবার লকডাউনের তৃতীয় দিনে অনাকাঙ্খিত ঘটনারও দেখা মিলে। বন্দর খেয়াঘাটে মাস্ক পরিহিত ছাড়াই খেয়া পার হতে চাচ্ছিল যুবক। তা দেখে দায়িত্বে থাকা নৌ-পুলিশের এক সদস্য তাকে মাস্ক কেন নাই জিজ্ঞাসা করায় উল্টো সেই পুলিশের সাথেই অশোভন আচরণ করা হয়। এতেই ক্ষান্ত নয় সে যুবক, পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে বসে আপনার বাড়ি কই। একপর্যায়ে তার বড় ভাই এসে ছোট ভাইকে থামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে সেও উত্তেজিত হয়ে উঠে। আর এ বাক বিতন্ডা উভয়ের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা যায়। পুলিশ তাকে শাস্তি সরুপ কিছু সময় পরে যাওয়ার জন্য বললেও সে মানতে নারাজ। সে যাবেই যাবে, মাস্ক নেই তো কি হয়েছে !
সর্বশেষ ৪ঠা জুলাই রবিবার লকডাউনের চর্তুথ দিনে কঠোর অবস্থানে রয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছিলো পুলিশের চেকপোস্ট। এছাড়াও মাঠে বিজিবি ও সেনাবাহিনী ও র্যাবের ছিল কঠোর তৎপর। রবিবার সকাল থেকেই শহরের চাষাড়া এলাকায় কঠোর অবস্থানে ছিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ ম্যাজিস্ট্রেটগণ। লকডাউনের চর্তুথ দিনে ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কঠোর লকডাউন (কঠোর বিধিনিষেধ) না মানায় ৭৮টি মামলায় ৫৮ হাজার ২শ টাকা জরিমানা করা হয়।