নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর এর কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলেও দেড়যুগেও পূণরায় গঠিত হয়নি কোন ওর্য়াড কমিটি। নানা গুঞ্জন ও সমালোচনার মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পর ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর কমিটি অনুমোদিত হলেও অচলাবস্থা কাটেনি। দায়সারা মহানগেরর আওতাধীন ওয়ার্ডগুলোতে দৃশ্যমান দলীয় কার্যক্রম না থাকা এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এতে করে যেমনি ঝিমিয়ে পড়েছেন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা। তেমনি হতাশায় সটকে পড়ছেন নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী মেধাবী কমীরা ।
জানা গেছে, নব্বই দশক পর্যন্ত ৯টি ই্উনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল শহর আওয়ামীলীগের কমিটি। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চাষাঢ়া ইউনিয়ন, হাজিগঞ্জ, শীতলক্ষা, পাইকপাড়া, দেওভোগ ইউনিয়ন। যেসব এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বেশ চাঙ্গা ছিল কর্মীরা। সর্বশেষ বিশ দশকের পর পৌরসভা ও সিটিতে নগরায়ণ শুরু হলে শহর থেকে মহানগরে রূপ নেয়। আর এরপর থেকে মহানগরের আওতাধীণ ৮টি ওয়ার্ড সহ মোট ২৭টি ওয়ার্ডই গঠিত ছিল ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ কমিটি। তারপর ঢিমেতালে বেশ ভালোই চলছিল কমিটির কার্যক্রম। কিন্তু বিভিন্নসময় মহানগর কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নজরে আসলেও পরিবর্তনের ছোয়া লাগে নেই ওর্য়াড কমিটিতে।
এ প্রসঙ্গে দলটির কয়েকজন নেতকার্মী জানায়, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে দেড়যুগ। কিন্তু নানা অযুহাতে দুই/তিন বছর মেয়াদি ওইএসব কমিটি এখনো নতুন নেতৃত্বের মূখ দেখতে পারেনি। কখনো নির্বাচন, কখনো সদস্য সংগ্রহ কিছু না কিছু থাকেই। আর এসব কারণে সম্ভপর হয় না ওর্য়াড কমিটি গঠন। তাই সেই পুরনো কমিটিতে থাকা অনেকই এখন চলতেও পারে না। কেউ কেউ চলে গেছেন না ফিরার দেশে। অনেকই আবার ওর্য়াড এর পদের পাশাপাশি, এখন জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগে পদ আকড়ে ধরেও বসে আছেন। সেদিক থেকে অনেকই এখন দুটি পদেই বহাল। অন্যদিকে কমিটিগুলো না হওয়ায় অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ঢেলে সাজানোর কথা বলেছে অনেক নেতাকর্মীরাই।
এ ব্যাপারে ১১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. নুরুল হুদা বলেন, ৩৫ বছর ধরে তো আমিই সভাপতি হয়ে আছি। আমার নিজের কাছেও ভালো লাগে না। কয়েকবার তো মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতাগো বলেছি। কিন্তু তারা নানা কারণ দেখাইয়া আর কোন উদ্যোগ নেয় না। আর সম্মেলন না দিলেতো আমরাও কিছু করতে পারিনা। তাছাড়া আমি এখন জেলা আওয়ামীলীগ কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক। তাই এমনিতেও আমার ওর্য়াডের নেতৃত্বে থাকাটা বেমনান।
১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমি দায়িত্বে আছি আঠারো বছর হয়ে গেছে কমিটির বয়স। এখনো পর্যন্ত কমিটি না হওয়াতে অনেক কিছুতে পরিবর্তন হচ্ছেনা। নতুন কমিটিতে ঢেলে সাজানো হলে নতুন দায়িত্বে আগতরাও উদ্যোমী হতো, কার্যালয়গুলিও সচল থাকতো। আমরাও চাই দ্রæত যেন কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ বিষয়ে ১২নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কমিটি হওয়া খুবই জরুরী। নতুনদেরও সুযোগ করে দিয়ে পুরনোদেরও অন্যান্য বড় দায়িত্ব দিলে আমাদেও দল আরো শক্তিশালী হবে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা জানায়, যেহেতু এখন করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেক্ষেত্রে গত এক বছর ধরেই সকল কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। কিন্তু মহামারী করোনা যখন ছিলনা ওই সময় কেন উদ্যোগ নেয়া হয়নি ? আর এতে কমিটি বা কারো ব্যর্থতা রয়েছে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন ব্যর্থতা নাই, যেহেতু নির্বাচন ছিল, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছিল, নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচী ছিল। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশে বিভিন্ন কর্মসূচী ও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তবে আশা করা যায় করোনা পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে আমরা আগামী বছরের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করার কাজ সম্পন্ন করবো।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। তারা সম্মেলন করে না করলে তো কিছু করার নাই। তবে ওয়ার্ড কমিটিগুলো বহু বছর ধরে আটকে আছে। হওয়া দরকার।