নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : সাত জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণার প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জে তৎপর রয়েছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল থেকেই ২১টি স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। বিভিন্নস্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও টহলে রয়েছ ভ্রাম্যমান আদালতের কয়েকটি টিম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও অনেকাংশে খোলা। তাই সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। নদীপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সীমিত আকারে খেয়াপারাপার চলছে। যেখানে অনেকেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যপারে তেমন কোন সচেতনতা লক্ষ করা যায়নি। তাছাড়া নির্দেশনা অমান্য করে সড়কে বের হওয়া প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, রিকশাগুলোকে জেলার প্রবেশমুখ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস সাহা গণ্যমাধ্যমকে বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর রয়েছে জেলা পুলিশ। আমরা চলাচলারত যানবাহনকে আটক করে আইননুক ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো মামলা দেওয়ার সেইগুলো মামলা দিচ্ছি। যেগুলোর প্রতিষ্ঠান অনেকে পরিচয় দিচ্ছে যে আমি গার্মেন্টস এর কর্মকর্তা, ব্যাংকের কর্মকর্তা, যেগুলোকে পাচ্ছি আমার বুঝিয়ে বেক (পাঠিয়ে) দিচ্ছি আর যেগুলো পারমিট করার মত সেগুলো কাগজপত্র দেখে, কথাবার্তা বলে ছেড়ে দিচ্ছি।
জনসাধারনে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণরা সচেতন হই, স্বাস্থ্যবিধি মানি। আর বিশেষ যে ৭ দিনে লকডাউন এই লকডাউনকে সকলেই যেন লকডাউন এর মত মেনে চলি তাই সকলের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা কামনা করছি।
অন্যদিকে শহরের প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকায় সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ছোট যানও চলতে দেয়া হচ্ছে না। লকাউনের মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা থাকায় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে কারখানায় পৌঁছাতে দেখা গেছে পোশাক শ্রমিকদের। শুধুমাত্র অসুস্থ ব্যাক্তি, বৃদ্ধ, নারী ব্যতীত যাত্রী নামিয়ে দিয়ে রিকশা সড়কের উপর উল্টিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে এ আওতার বাহিরে থাকা পণ্যবাহী গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সর্তকতা অবলম্বনে চেক করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এতে খানিকটা ভোগান্তিরও সম্মূখিন হয়েছে দূরদূরান্তে যাতায়াতরত যাত্রী সাধারণ। বিপাকে পড়েছেন নিত্যদিনে কাজে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের অ্যাডমিন কামরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেগুলো আগামী ৩০ই জুন পর্যন্ত কাজ করবে।
ঢাকা যাওয়া এক যাত্রী গণ্যমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় যাবো তাই বাসার থেকে বাস ষ্ট্যান্ডে এসেছি, ৩০ মিনিট হয়ে গেল দাঁড়িয়ে রয়েছি কিন্তু কোন গাড়ী পাচ্ছি না। কি ভাবে ঢাকায় যাবো? খুব কষ্ট ও দুভোর্গ নিয়ে জীবনযাপন পার করছি। এই লকডাউন এর কারণে আমাদের কষ্ট ও দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।
সাইনবোর্ড এলাকায় সকাল ৬টা থেকে অবস্থান নেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রেজা মাসুম প্রধান গণ্যমাধ্যমকে বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক লকডাউন অমান্যকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। দুপুর ২ টা পর্যন্ত প্রায় তিনশত যানবাহনকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশে বাধা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি পরিসেবার আওতাভুক্ত কিছু পরিবহন প্রবেশ ও বের হতে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, পুরো জেলায় মোট ৩০ টি পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। এর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম, ঢাকা-চট্রগ্রাম- সিলেট, রূপগঞ্জ এশিয়ান হাইওয়েতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোন রকম গণপরিবহন চলতে দেয়া হচ্ছে না । এর জন্য আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। লকাডাউন অমান্য কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, ঢাকার বাইরে থেকে যেখান দিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করা যায় বা বের হওয়া যায় এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১৮ টি মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছে। আজ ২২ই জুন মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা কাজ করছে এবং নারায়ণগঞ্জে প্রবেশে যাচাই বাছাই করে যানবাহনকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।