নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা-গোলাকান্দাইল স্ট্যান্ডে দিন দিন বেড়েই চলেছে মোবাইল চুরি, আতঙ্কে বাস যাত্রীরা। ভিড়ে ঠাসা বাস-মিনিবাস। আর সেই সুযোগ নিয়ে বাস-মিনিবাসে মোবাইল চোরদের দৌরাত্ম্য মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। বাসে সামান্য অসর্তকতার সুযোগে চোখের নিমিষেই চোরেরা তুলে নিচ্ছে দামি দামি মোবাইল।
প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি না থাকায় উপজেলার ভুলতা-গোলাকান্দাইল বাস স্ট্যান্ডে প্রতিদিনই কোনো না কোনো যাত্রী মোবাইল খোয়াচ্ছেন। থানায় অভিযোগ জানানো হচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ মোবাইল সংগ্রহও করছে। কিন্তু বেশির ভাগই ফেরত পাচ্ছেন না সাধের মোবাইল। বর্তমানে মোবাইল চোরদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত ভুলতা-গোলাকান্দাইল চৌরাস্তা।
৭ই জুন সোমবার গোলাকান্দাইল থেকে বিপ্লব হাসান নামে এক ব্যাক্তির ভাগিনা ছনপাড়া যাওয়ার জন্য একটি মিনি বাসে উঠতেই দেখে তাঁর মোবাইল নেই, পকেট ফাঁকা ! একইভাবে মোবাইল হারিয়ে যাচ্ছে অনেকের। মোবাইল চুরির বিষয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মোবাইল চোর চক্রের কবলে পড়া তানভির।
তানভির জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি থাকায় ভুলতা-গোলাকান্দাইল স্ট্যান্ডে যেমন গাড়ি সংকট তেমন লোকজনের প্রচুর ভিড়ও ছিল। স্ট্যান্ডে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি মিনিবাস আসে। পরে বাসে উঠতেই দেখেন প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটি উধাও। বাস থেকে নেমে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ফোন দিয়ে বার বার কল করলেও রিসিভ হয় না সেই মোবাইল। পরে এক রিকশাওয়ালা তাকে বলেন বাসে উঠার সময় তার মোবাইলটি এক চোর পকেট থেকে তুলে নিয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুলতা-গোলাকান্দাইল বাস স্ট্যান্ডে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র প্রতিদিনই মোবাইল চুরির এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই চোর চক্রে জড়িত পরাপরদী এলাকার সালাউদ্দিনের ছেলে কায়েম (৫০), পাঁচরুখী এলাকার রহিম (৪০), বলাইখাঁ এলাকার আলম, পাঁচাইখাঁ এলাকার শফিক, কাঞ্চন এলাকার মামুন, মাঝিপাড়া এলাকার জয়নালসহ আরো অনেকে। যেখানে মানুষের জটলা সেখানেই তারা। তাদেরকে প্রায় দেখা যায় বাস স্ট্যান্ডে ঘুরাঘুরি করতে। তারা স্ট্যান্ডে কোন বাস থামলে বাসে উঠতে বেশি হুড়োহুড়ি করে। এতে বিপাকে পড়ে যায় সাধারণ যাত্রীরা। আর এই সুযোগকে পুঁজি করে যাত্রীদের মোবাইল পকেট থেকে তুলে নিয়ে সরে পড়েন যাত্রীবেশী চোরেরা।
এছাড়া ভুলতা-গোলাকান্দাইল শিল্পোন্নত ও জনবহুল এলাকা হওয়ায় এখানে বহিরাগত চোরদেরও বেশ আনাগোনা। এছাড়া আরো জানা যায়, সংঘবদ্ধ মোবাইল চোর চক্রে যারা চুরি বা ছিনতাই করে থাকে তারা হয়তো মাদকাসক্তির জন্যে বা হাত খরচের টাকার জন্যে। কিন্তু ওদের মূল নাটের গুরুরা আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত। উচ্চ প্রযুক্তির আইফোন চুরি করলে চোরেরা চেষ্টা করেন যতটুকু সম্ভব খোলা অবস্থায় ফোনটি ওদের আইটি চক্রের হাতে তুলে দিতে। কারণ উচ্চ প্রযুক্তির আইফোনে ফিঙ্গার প্রিন্ট লক সিস্টেম থাকায় একবার বন্ধ হয়ে গেলে খোলা মুশকিল।
আমির হোসেন নামে এক রিকশা চালক বলেন, আমাদের চোখের সামনে মোবাইল চুরি করলেও তাদের ভয়ে আমরা কিছুই বলতে পারি না। তারা এমনভাবে চুরি করে বুঝার উপায় নেই। যাত্রীদের কথা কি বলব এই চোরেরা তো কিছুদিন আগে আমার মোবাইলও নিয়া গেছে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান যুগে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মধ্যে মোবাইল একটি। মোবাইল চুরি করা জঘন্য অপরাধ। যদি মোবাইল চুরির সাথে সম্পৃক্ত এমন কাউকে পাই তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, আমার কাছে এখনো মোবাইল চুরির কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি আসে তবে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।