নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ সংবাদ দাতা ) : অবেশেষে বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রদত্ত নায়েবে আমীর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি, ডি.আই.টি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল। সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে পবিত্র শবে বরাতের বয়ানে সকল মুসুল্লিদের সামনেই তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে হঠাৎ করে এমন ঘোষনায় জেলাজুড়ে নানা গুঞ্জন চলছে। তাছাড়া আব্দুল আওয়ালের ওই বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে তাকে মাইনাস করার চেষ্টা চলছে, কর্মসূচীতেও দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কি কারণে তাকে মাইনাস করা হচ্ছে এ নিয়ে বড় কোন রহস্য আছে বলে মনে করছেন সচেতন বোদ্ধারা।
তিনি বয়ানে বলেন, ডিআইটি মসজিদের সামনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান ছিল। যার কারণে আমরা বের হলেও পরবর্তিতে আম গাছ তলা ও মসজিদের ভিতরেই ছিলাম। তা না হলে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হতে পারতো। কোন মায়ের সন্তান হারালে এর দায়ভার আমার উপর পড়তো। মসজিদগুলোর আয়না ভাঙ্গা পড়ে থাকতো। হয়তো রক্তাক্ত হতো। তখন মসজিদের জন্য আমি কি জবাব দিতাম। আবার অনেকে আমাকে তখন মসজিদ থেকে সরিয়ে দিলেও খুশি হতো। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আমাদের বুঝতেছেনা, আমাদের লোকেরাও বুঝতেছেনা। অতি উৎসাহীওয়ালারাও বুঝেনা। তারা বলছে, হুজুর হরতালের দিন গেলোনা কেন? তাই আমি বলতেছি, আমি আর হেফাজতে নেতৃত্ব দিবোনা, আমি মসজিদে থাকবো। আমি আর সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে কোন কাজে যাবোনা, যাবোনা, যাবোনা। আমি একবারে নিষেধ করেছি। আমি শুধু মসজিদের আছি। যারা অতি উৎসাহী আছো তোমরা কর, আমার বৃদ্ধ বয়স হয়েছে, অসুস্থ মানুষ, হাঁটতে পারিনা, দাঁড়াতে পারিনা। কর্মী হিসেবে যতদিন পারি থাকবো। এটা সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি, সাংবাদিক সম্মেলন করে ইস্তফা দিয়ে দিবো। হেফাজতের নেতৃত্ব আর দিবোনা। তোমাদের শক্তি আছে তোমরা কর।
মাইনাস করে দূরে রাখা হচ্ছে দাবি করে আব্দুল আউয়াল হুজুরে বলেন, আছরের পর (২৯ মার্চ) আমার এখানে দোয়া ছিল, তারা এটা উপেক্ষা করে দেওভোগ মাদ্রাসায় গিয়ে দোয়া পড়ছে। আমারে অটোমেটিক সাইড করছে, তারা বলে এমন নেতা দিয়ে আর চলবোনা। আমিও আল্লাহর হস্তে নেতৃত্ব ছেড়ে দিলাম, আর নেতৃত্ব দিবোনা। হেফাজতের আমির হওয়ার দরকার নেই, সাধারণ মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকবো। আর কোন ডাক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আসবেনা। আমাকে মাইনাস করে বলতেছে, কেন আমি বের হলাম না। আমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
হরতাল প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, সেই দিন র্যাব-পুলিশ এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল আমরা মসজিদ থেকে বের হলেই গুলি করতো। তারা অ্যাকশনে চলে গেলে আমাদের কাছে তো অস্ত্র নেই আমরা তো পারবোনা। যার জন্য ডিআইটি মসজিদের আমগাছ তলা পর্যন্তই আমরা সীমাবদ্ধ ছিলাম। পরে শোনা যাচ্ছে, চিটাগাংরোডে ১৭টি গাড়ি পুড়েছে, কারা পুড়েছে তা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়। কিছু সন্ত্রাসী লোকেরা পুড়েছে, আমাদের ছাত্ররা নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, আপনি যদি আমাদের কথাগুলো না মানতেন তবে এই মামলাগুলো সব আপনাদের নামে হতো। এক নম্বর আসামী আপনি হতেন।
এদিকে এরআগে একটি গণমাধ্যমকে হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান জানিয়েছিলেন, সোমবার (২৯ মার্চ) বিকালে ফতুল্লার দেওভোগ মাদ্রাসা জামে মসজিদে হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জ মহানগর আয়োজিত এক সভা শেষে বহিষ্কারের জন্য কাগজ পাঠানো হচ্ছে। আর গতকাল হেফাজতের হরতাল কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় ঘোষণা। মাওলানা আব্দুল আউয়াল নিজ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বন্ধের ঘোষণা দিতে পারেননা। কিন্তু তিনি তাই করেছেন। আমরা তাকে বহিঃষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাচ্ছি। আশা করছি, তিনি বহিঃষ্কার হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২৮ই মার্চ রবিবার হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েকটি স্পটে বাস-ট্রাকে আগুন, সড়কে আগুন, পুলিশের সাথে সংর্ঘর্ষ, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত অর্ধশত আহত হন। প্রায় সারাদিন সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ থাকে। দফায় দফায় হেফাজত কর্মীদের সাথে পুলিশের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় জেলার বিভিন্নস্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও হলেও শহরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল হেফাজত নেতারা। এছাড়াও একাধিবার পুলিশের কর্মকর্তা হেফাজত নেতা আব্দুল আওয়ালের সাথে আলোচনা করেছেন, পরে তিনি আশ্বস্ত করেছেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করবেন।