নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : জলাবদ্ধ ডিএনডিবাসীর দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে অস্থায়ী ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজে ২টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ জুন) বিকালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংদস সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। ডিএনডির মেগা প্রকল্পের কাজে যে ৫ টি পাম্প হাউজ বসানো হচ্ছে তারই মধ্যে বড় এই দুইটি পাম্প। যার মাধ্যমে ডিএনডির ৪০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করা সক্ষম।
এসময় জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান জানায়, নতুন ২টি পাম্প চালু হলে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিএনডির পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। ডিএনডি জলাবদ্ধাতার ছবি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ডিএনডির পরিপূর্ন কাজটি করতে হলে আরো বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। যদিও করোনাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জিডিপির ৩ দশমিক ৬ ভাগ অনুদান দিয়ে দিয়েছেন। তারপরও আমি আশা করি, আল্লাহর হুকুমে আগামী ২৫ তারিখের মিটিংয়ে আমাদের ডিএনডির প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ সুস্থ্য রাখলে আমরা পেয়ে যাবো এবং এ কাজ সম্পন্ন হবে।
এসয়ম ১৯ ইসিবির প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল মাশফিকুল আলম বলেন, আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম, এ বছর বর্ষায় আমরা পাম্পগুলো চালু করবো। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মাহমারী করোনা ভাইরাসের কারণে লোকবল সমস্যার কারণে আমরা কাজ করতে পারিনি। তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে যখন মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হলো স্থানীয় সংসদ সদস্যের দিক নির্দেশনায় আমরা এলাকা ঘুরে দেখলাম অনেক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এর কারণে গতকাল সারা রাত আমরা কাজ করেছি। তাই অস্থায়ীভাবে আমরা ৪০০ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি পাম্প চালু করার ব্যবস্থা করেছি। এই পাম্প চালুর ফলে আগামী ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিএনডির ২০ লাখ লোকের দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধার সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজের এসডি রাম প্রাসাদ বাছার জানায়, ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে ৩ হাজার ২০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন পানির পাম্প বসাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ইতিপূর্বে পরামর্শ দিয়েছিলো। সেই নিরিখে সেনাবাহিনী কাজও করছে। পাম্পগুলো বসানো হলে ডিএনডিতে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের ছোট দুইটি ও বড় ৩ টি পাম্প দ্বারা সর্বমোট ৪৬৪ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করতে পারছি। ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্প নষ্ট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি। তবে ঐ পাম্প আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে ঐ পাম্প সচল করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
২০ লাখের অধিক বসতিপূর্ন ডিএনডির জলাবদ্ধতার লাঘব করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্প ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটি ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে ছিল। তখন এটি তড়িগড়ি করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এ প্রকল্পের ভেতরে অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুত ও পানির লাইন রয়েছে। এ গুলো দুরীকরণ করতে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। এখন আমরা মনে করি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১৩শ কোটি লাগবে। তবে বর্তমানে অন্তত আরো ৫০০ কোটি টাকা হলে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অর্থ বরাদ্দ না হলে ডিএনডিবাসীকে জলাবদ্ধ হয়েই অনেকদিন ভুগতে বলে উল্লেখ করেন তারা।
উদ্বোধনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন, ১৯ ইসিবির প্রকল্প পরিচালক লেঃ কর্ণেল মাশফিকুল আলম, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার্স মেজর কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, নাসিক প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতি, নাসিক কাউন্সিলর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক আরিফুল হক হাছান, নাসিক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকা রয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সনের বন্যায়ও ডিএনডিতে পানি প্রবেশ না করায় মানুষ ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। এতে করে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে ডিএনডিতে। ইতিপূর্বেও একাধিকবার ডিএনডিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছিলো। চলতি সালের এপ্রিল মাস থেকে ফের ডিএনডিতে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। যা এখন ভয়াবহস রূপ ধারণ করেছে। এদিকে ডিএনডির অনেকস্থানে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের জন্য বিভিন্নস্থানে পানি আটকে রেখেছে। এতে ডিএনডিবাসীর দূর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।