নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রমজান মাসে সবাই মসজিদে যায়। তারাবি নামাজ পড়ানোয় মসজিদে ইমাম–মোয়াজ্জিনদের ভালো আয় হয়। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। যদিও যারা মসজিদ কমিটিতে আছেন তারা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন, বিত্তশালীরা দান করে যাচ্ছেন। এরপরও আমি মনে করি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। সব মসজিদে ঈদ–রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেবো। সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস (কোভিড–১৯) মহামারির কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ঈদ ও রমজান উপলক্ষে সব মসজিদে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ঈদের আগে আরও সাত হাজার কওমী মাদ্রাসাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৮৬৫টি কওমী মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রায় ১০ কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি। কোন মাদ্রাসায় কতজন এতিম আছে আমরা হিসাব নিয়েছি। সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদ্রাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমী মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম–অসহায় যারাই আছে কোনও শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞার শিথিলতার জন্য হয়তো সংক্রমণ একটু বেড়ে গেছে। তবে আশা করি এটাও আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবুও দেশের জনগণকে বলবো আর একটু নিজেরা সুরক্ষিত থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সবাই দোয়া করেন যেন আমরা এই অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারি। এটা বলবো না সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন। কেননা আপনাদের কিন্তু ওক্সিজেন নিতে হবে নিঃশ্বাস নিতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় বা যখন জনসমাগমে যাবেন বা বাজারঘাটে যাবেন তখন পরবেন। যখন এমনি থাকেন তখন কিন্তু এটা পরবেন না। এটা কিন্তু অনেক সময় ভালোর চেয়ে ক্ষতিও করে। এমন মাস্ক পরতে হবে যাতে সহজে শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়া যায় সেটা। এন৯৫ মাস্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের পরার জন্য না। এটা যারা ডাক্তার, নার্স বা যারা কোভিড রোগীর সেবা দেবে তাদের জন্য। এটা সাধারণ মানুষের পড়ার দরকার নাই বা যৌক্তিকতাও নাই। ঘরে তৈরি করেও মাস্ক পরা যায়।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস (কোভিড–১৯) মহামারির কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা কার্যযক্রমের উদ্বোধন করেন। মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিউরক্যাশের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি এ নগদ অর্থ পাঠানো হচ্ছে। এ সহায়তার জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরা হলে এই নগদ সহায়তায় উপকারভোগী হবে অন্তত দুই কোটি মানুষ।
ভাতা পাওয়া উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস–ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেওয়া লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং/অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্বলিত বোতাম টিপে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২ লাখ ০৯ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট হতে উপবৃত্তি বাবদ ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।