ওদের হয়রানীতে অতিষ্ট, প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রির্পোটার ) : পেশাটি ভিক্ষুকের হলেও এরা ভিক্ষুক নয়! কখনও অসুস্থ্য বাবা, কখনও মা। আবার কখনোবা স্বামী-স্ত্রী কিংবা সন্তানাদী অসুস্থ্য। নানা আবেগী দোহাই দিয়ে চলছে ভিক্ষাবৃত্তি। তবে ওদের দাবী আমরা ভিক্ষুক নই। কারণ এদের কৌশলটা ভিন্ন। এদের হাতে দেখা যাবে না ভিক্ষুকের কাছে থাকা থালা বা ঝুড়ি। বরং সুন্দর পোশাক পরিহিত, কথা ভাষার উচ্চারণ ও বেশ সাবলীল। দেখে মনে হবে উচ্চ শিক্ষা লাভ করা অসহায় ব্যক্তিটি।
শহরের বিভিন্নস্থানে গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে খোঁজ মিলে এমন অজানা অনেক কিছুই। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা। স্থান নবীগঞ্জ ফেরী। দেখা মিলে ১০ থেকে ১২ বছরের তিন চার জন কিশোরের। পেন্ট পড়া খালি গায়ে ঘুরছে। হাতে রয়েছে একটি গামছা ও প্রেসক্রিপশন। এপাড় ওপাড়ে যখনই ফেরীতে গাড়ি উঠানো হয়। তখনই গাড়ির আরোহীকে তাদের ঘিরে ধরে বলতে শোনা যায়, গাড়িটা মুছে দিবো, আমার মা অসুস্থ্য আর্থিক সহযোগীতা করুন। অথচ হতে থাকা কাগজটি প্রেসক্রিপশন মনে হলেও, প্রকৃত পক্ষে তা ভুল। সেটি পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালের টিকিট। যেখানে নাম লিখা ছাড়া, রোগের বিবরণ বা অন্যান্য বিবরণ লিখার জায়গার ঘরগুলো খালি ছিল। অথচ এ নিয়েই শত শত মানুষের চোখে ধূলি দিয়ে আবেগের আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
এদের একজনের সাথে কথা হলে খুব ভয় নিয়ে জানায়, আমাগো সরদার আছে, আমাগো লগের কেউ যদি দেখে, শুইনা ফেলে। কাউরে কিছু কইসি আমারে মাইরা ফেলব। প্রতিদিন ৩থেকে ১০ হাজার টাকা পাই। তারপর সরদারও আমাগো দৈনিক ২শ কইরা টাকা দেয়। আর খাওন দাওন সব হেরাই খাওয়ায়। মাসে ১০ হাজার টাকা দেয়। এরপর দৌড়ে অন্য সাথীদের সাথে চলে যাওয়ায় আর কিছু জানা তার কাছে সম্ভভ হয়নি। তবে এদের মত আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় বন্দরের সাবদী এলাকায় তার বাড়ি, তাদের দেখাদেখি সেও নাকি এখানে গোসল করতে আসে, পাশাপাশি দুই থেকে তিনঘন্টা থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাসায় চলে যায়।
গত মাসে কথা হয় চাঁনমারী এলাকার বাসিন্দা ছদ্মনাম সালমা। বয়স ৪৫। কথা বার্তা ও আচরণেও বেশ নম্র। লেখাপড়াও করেছেন ৪র্থ শ্রেনী র্পযন্ত। শারিরিক অবস্থাও সচল। তবে এ পেশা অনেক লাভজনক ও পেটের দায়ে এটি বেছে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাই সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে বিভিন্নস্থানে, কিন্তু ভিন্ন বেশে! নিজের হাত ও পা কে ভিন্ন ভঙ্গি করে তাকে প্রমান করতে হয় সে একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে তার স্বামী না থাকায় এ কৌশলেই প্রতিদিন তাকে উপার্জন করে চলতে হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে একটি পরিবহন বাসে কথা হয় আরো একজন যুবকের সাথে যার বয়স প্রায় ত্রিশ। দেখলে মনে হবে কোন প্রাইভেট কোম্পানির চাকুরীজীবী। তার গাঁয়ে পরিহীত সুন্দর শার্ট ইন করা পেন্ট, ও জুতো। সে দাবী করে আমি কোন ভিক্ষুক নই। পৃথিবীতে তার কেউই নেই। ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় এক মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছে। সর্বশেষ সে এসএসসি পাশ করেছে। তবে বর্তমানে টাকার অভাবে সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছেনা। তার মামা বাড়িতেও তার এখন ঠাই নেই। তাই নাকি চকলেট বিক্রি করে। আর পথে কেউ সাহায্য দিলে তা নিয়েই তার জীবন চলছে। তবে সে কলেজে যেতে চায়। তাই মানুষের সহযোগীতা পেতে বিভিন্নস্থানে ঘুরে এ পেশায় চলছে।
তবে সচতেন মানুষের প্রশ্ন জাগে, এসএসসি পাশ করা ছাত্রই যদি হয়। তাহলে এই পেশাকেই কেন বেছে নেন। আর যে চকলেট তিনি বিলিয়ে থাকেন। সে চকলেটও কেউ নেন না। বরং ফেরত দিয়ে আবেগের তাড়নায় আর্থিক সহযোগীতা করে থাকেন। তার সাবলীল কথায় কেনই বা কোন আঞ্চলিকতা আসে না। এর মানেই বলা চলে একজন পেশাদার হওয়ায় সে আচরণ তার অভ্যস্থ।
এছাড়াও এমন চিত্র দেখা মিলে পথেঘাটে, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল, স্কুল কলেজের সামনে, মাজার, বাসা বাড়িতেও যাদের রয়েছে অবাধে বিচরণ। তবে শহরময় বাসাবাড়িতে আগের মত তেমন একটা ভিক্ষুকের আনগোনা না দেখা গেলেও নির্ধারিত কিছু স্থানে এখন বিচরণ করছে কয়েকটি প্রতারক চক্রের সদস্য। যাদের সদস্যরা বিভিন্ন বেশে, নানা দোহাই দিয়ে পথেঘাটে সাধারণ মানুষের কাছে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
আর এ কাজে সিংহ ভাগই ব্যবহার হচ্ছে দেড় বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭ বছর বয়সী ছেলে-মেয়ে। এছাড়াও বাদ যায়নি বৃদ্ধ অথবা যুবক/যুবতি। সারাদিনে তাদের উপার্জিত টাকাও চুষে নিচ্ছে একটি র্অথলোভী চক্র। যেকারণে বঞ্চিত হচ্ছে এ কাজে জড়িত তাদের সদস্যরাও। সল্প পরিশ্রমে বিনা পুজিঁতে একমাত্র লাভজনক পেশায় র্অথ লুফে নিতে নানা কৗশলে এরা ঘুরছে শহরের আনাচে কানাচে। তবে সব সময়ই পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে ওদওে বাধ্য করা প্রতারক মূল হোতারা। আর তাদের হয়রানীতে ঠকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, এরআগে সোনারগাঁ উপজেলায় তিন বছরের ছোট বোনকে নকল রক্তমাখা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে, অন্ধ সাজিয়ে ভিক্ষা করার দায়ে তাসলিমা আক্তার (১৫) নামে এক কিশোরীকে আটক করেছিল পুলিশ। গত ২৮ মে দুপুরে উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তার ফুট ওভার ব্রিজের ওপর ওই শিশুকে ৫০০ টাকা ভিক্ষা দিতে গিয়ে এ ঘটনা উদঘাটন করেন সোনারগাঁ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ। প্রতারক ভিক্ষুক কিশোরী রাজধানীর রায়েরবাগের সি বøকের আবুল ডাক্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া সালাউদ্দিনের মেয়ে। তারই আরেক মেয়ে শিশু সালেহাকে (৩) অন্ধা সাজিয়ে প্রতারণা করা হয়।
ওই সময় সোনারগাঁ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, সবার মতো আমিও এমন দৃশ্য দেখে পকেট থেকে ৫শত টাকা বের করে সাহায্য করতে গিয়ে সন্দেহ হলে প্রতারণার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে। এভাবে যদি মানুষ প্রতারণা করে ভিক্ষা করে তাহলে তো প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে।