নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ৩৩ বছরের একটি পুরনো ড্রেজার জুনিয়র হাই স্কুল এক নোটিশেই বন্ধ করে দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমদ। আর এতে করে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপন্ন হয়েগেছে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে।
সূত্রে জানা যায়, নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষাবঞ্চিতদের শিক্ষিত করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ড্রেজার পরিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো ড্রেজার জুনিয়র হাই স্কুল। এখানে বিনা বেতন এবং বিনামূল্যে সুবিধা বঞ্চিত পরিবারের সন্তানেরা শিশু শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করতো। দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট এই স্কুলে ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন অফিস সহকারী এবং ১০জন শিক্ষক রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এই এগারজনকে দৈনিক হারে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মচারী হিসেবে হাজিরা ৫২০ টাকা এবং ৪২০ টাকা করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর কোনো খরচ এখানে বহন করতে হয়নি।
তবে, বিগত ৩৩ বছর ধরে এই স্কুলটি চললেও কখন কোনো সমস্যা না হলেও এইবারই মৌখিক এক নৌটিশে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করে দেন ড্রেজার পরিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। এ কারণে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি এখনও ভর্তি হতে পারেনি। তারা ভর্তি হতে পারবেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নিজামউদ্দিন জানান, আমাকে এখানে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কর্তৃকপক্ষের সিদ্ধান্তে বন্ধ করা হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই। মঙ্গলবার একটি ডেপুটি ডিরেক্টর এসেছিলেন। তিনি এসে স্কুলটির চেয়ার টেবিল ও আসবাপত্রের তালিকা করে নিয়ে গেছেন।
স্কুলটির শিক্ষক পারভীন আক্তার মালা জানান, তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছেন, দেশকে আলোকিত করছেন, ঠিক সেই সময় আমাদের ড্রেজার জুনিয়র স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলো। এই স্কুলটিতে যেসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো তাদের বেশীরভাগই আশেপাশের বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিক ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেকেই কাজ করেও লেখাপড়া করতো। বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কতগুলো কঁচি স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে ড্রেজার পরিদপ্তরের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক জানান, তারা সোমবার ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন। ড্রেজার জুনিয়র স্কুলটি বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থা গ্রহণ করেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, একটা স্কুল আকিস্মিক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া অপ্রত্যাশিত। এটা কেউ করতে পারে না। তাছাড়া বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব। প্রান্তিক থেকে শুরু করে ঝরে পড়া ব্যক্তিদের শিক্ষার আওতায় আনতে সরকার কাজ করছে। সেখানে এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমদ জানান, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই। স্কুলটির জায়গায় ট্রেনিং সেন্টার করার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি জানান এটা ভবিষ্যতে হতে পারে। সেরকম হলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।