এক ক্যাপসুলে বাদশা!

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : কী ভাই লাগবো নাকি? ভালো তো, কাজ হবে? হবে মানে ১শত পার্সেন্ট। না হলে টাকা ফেরত। এক ক্যাপসুলেই ফুল পাওয়ার! হয়ে যাবেন বাদশা! ১টাই দেন টেস্ট করি। একবার নিলে বারবার আসবেন। ১ পাতা নিয়া যান, ১০টা আছে। স্টক কিন্তু সিমিত। এভাবেই আলাপচারিতায় বিক্রেতারা ক্রেতাদের টার্গেট করে নানাভাবে ফুসলিয়ে শহরের বিভিন্নস্থানে অবাধে বিক্রি করে যাচ্ছে যৌন উত্তেজক বাহারী ওষুধ।

যৌন উত্তেজক এসব ওষুধ কিনতে ভিড় জমাচ্ছে  ৫০ উর্ধ্বে বৃদ্ধ সহ কলেজ পড়ুয়া অনেক তরুণ যুবকরাও। আর এতে  কাবু হয়ে আসক্তি হচ্ছে তারা। ব্যবসার নামে গোপনে চলছে আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ এসব উত্তেজক ওষুধের বাণিজ্য। বিভিন্ন চোরাপথে দেশের বাজারে আসছে এসব ওষুধ। যা বিক্রেতারা এসব ওষুধকে ‘পাওয়ার’ বলে অভিহিত করে চালিয়ে দিচ্ছে। এসব পাওয়ারের মধ্যে ‘ইয়াবা’ নিয়ে দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলেও অন্যান্য ওষুধ নিয়ে নেই তৎপরতা। এসব ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু অভিযান চালালেও মূল হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যৌন উত্তেজক বলে প্রচার করা অনুমোদনহীন দেশীয় ওষুধের বাজারও বাড়ছে ব্যপক চাহিদা।

রবিবার (৬ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়মনীতির কোন  তোয়াক্কা না করেই শহরের চাষাঢ়া থেকে শুরু করে চানমারী, নবীগঞ্জ ঘাট, কালির বাজার, ১নং রেল স্টেশন, ফলপট্টি, ২নং রেল গেইট, ডিআইটি, মন্ডল পাড়া সহ বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। আর যারা বিক্রি করছে এদের বেশীর ভাগই স্কুলের গন্ডিও পার হয়নি। কিন্তু চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনী প্রচার ও তাদের কথাবার্তায় হার মানাবে অনেক চিকিৎসকদেরকেও। কারণ তারা চিকিৎসক বিষয়ে পারদর্শী না হলেও এ বিষয়ে তারা প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত। তাদের যেমনি নেই কোন অনুমোদন। তেমনি ক্রেতাদেরও এসব উত্তেজক ওষুধ নিতে দরকার হয়না কোনো প্রকার চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন। শুধু কিছু টাকা দিলেই হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক সিরাপ, ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট। যেসব অধিকাংশ ওষুধের গায়ে মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখও লেখা থাকে না।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে ভারতের ইন্টাগ্রা’ ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আমেরিকার ভায়াগ্রার প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য ৭৫০ টাকা। ভারতের সেনেগ্রা ও কামাগ্রা প্রতি ট্যাবলেট ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আমেরিকার টাইটানিক এক বোতলের দাম চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। খুচরা ট্যাবলেট ৪০০ টাকা। টাইটানিকে ইয়াবার মতো উত্তেজনার পাশাপাশি নেশা হয়। তাই ইয়াবার ক্রেতারা কেউ কেউ টাইটানিক সেবন করছেন। কম দামে পাওয়া যাচ্ছে চীনের জিয়ংবার। একটি ট্যাবলেটের দাম ৭০ টাকা। জিনসিন প্লাস ৯০০ টাকার দরেও বিক্রি হয়। এ দর দামগুলোও আবার কোথাও অনেক কম বেশ করেও বেচাঁকেনা হয়ে থাকে।

বিক্রেতারা দাবি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করে অভিযোগ তুলেন, আমরা মেয়াদহীন ওষুধ বিক্রি করিনা। অল্প পুজিঁতে ব্যবসা করে সংসার চালাই। আমরা এসব ওষুধ অনুমোদিত ফার্মেসী ও রিপ্রেজেন্টিভ থেকেই সংগ্রহ করি। তারপর বিক্রি করি। কিন্তু ক্রেতাদের ঠকিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে বড় বড় পয়সা ওয়ালা হারবাল এর নামে চালিয়ে দেয়া অসাধূ কিছু ব্যবসায়ীরা। তারা উন্মুক্তভাবেই শহরে পোস্টার, ব্যানার সহ টেলিভিশনেও বিজ্ঞাপন প্রচার চালিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

এ ব্যপারে খানপুর ৩ শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. মোতালেব হোসেন জানায়, উপযুক্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া শুধু উত্তেজক ওষুধ নয় কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। এতে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ওষুধ এক ধরনের মাদক। কারণ রোগ মুক্তির জন্যই ওষুধ সেবন করা হয়। যখন ওষুধ সেবনটা অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন  আসক্তি বাড়ানো ওষুধগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াঁয়। যা মাদকের মত নেশাগ্রস্থ করে ফেলে। পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে ২ থেকে ৫ শতাংশের দুর্বলতা থাকতে পারে। ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মানসিক সমস্যা। সে জন্য বিভ্রান্ত হয়ে উত্তেজক ওষুধ খায় অনেকে। এসব ওষুধ হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এতে লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

উত্তেজক ওষুধে আসক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে কৌতূহলেই খাওয়া শুরু করেন তারা। ভালো লাগা থেকে এখন আসক্তি ও নেশা। কেউ কেউ বিশেষ শারীরিক ক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। পরে ওষুধ না খেলে তারা স্বস্তি পান না এমনটা দাবী সেবনকারীদের।

তবে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে জেলা সিভিল সার্জন এহসানুল হককে তার ব্যবহৃত নাম্বারে কল দিলেও তিনি তাঁর ফোনটি রিসিভ না করায় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

add-content

আরও খবর

পঠিত