নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সাবলম্বী করতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের মাধ্যমে ২০২ জন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার মাঝে ১ কোটি ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে উক্ত অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আরো ২ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দর থানা এলাকার ২০০ জন্য অসহায় মুক্তিযোদ্ধার মাঝে ১ কোটি অনুদান প্রদান করে ছিলেন।
শনিবার ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১২টায় বন্দর চিতাশাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত সমরক্ষেত্র-৭১ মাঠে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও অনুদান প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ২০২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করা হয়েছে।
চেক প্রদানের পূর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, এই টাকা আপনাদের। এই টাকার অর্ধেকটা দিয়ে আপনারা আপনাদের সমস্যা গুলো সমাধান করবেন। বাকি অর্ধেক টাকা আইএফআইসি ব্যাংকে আপনাদের একাউন্টে এফডিআর করে জমা রাখবেন। আগামী মার্চে আরো ২ কোটি টাকা দেওয়া হবে। মোট ৩ কোটি টাকার অর্ধেক দেড় কোটি টাকা অনেক বড় একটি তহবিল হবে। সেই তহবিল দিয়ে আপনারা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি বা অন্য নামে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আকারে ব্যবসা করে নিজেরা সাবলম্বী হতে পারবেন। এই টাকা দিয়ে একটি ফার্ম হাউজ করা যেতে পারে। যেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে দুধ, ডিম, মাছ, সবজি, মাংসের চাহিদা পূরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আপনারা যখন না থাকবেন না তখন যাতে করে আপনাদের সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যরা এটি পরিচালনা করতে পারে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এই সমিতি টিকে থাকবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সেখানে আপনাদের মত একজন অংশীদার থাকবো।
বন্দরে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবী রেখে তিনি বলেন, সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ হলেও বন্দরে এখনো মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ হয়নি। আইনী জটিলতায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজটি আটকের রয়েছে। আমি দাবী রাখবো যাতে করে দ্রুত বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করা হয়।
পরিপ্রেক্ষিতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মান্ডার ও জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য দুইবার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। যার ফলে কাজটি আটকে গিয়ে ছিলো। আর সেলামী মূল্যে যে সকল জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় সেই সকল জমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়ে থাকে। আমরা জানতে পেরেছি প্রকল্পের ফাইল প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে গিয়ে পৌছেছে আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের শুরু করা যাবে। পাশাপাশি তিনি সমরক্ষেত্র মাঠের যতটুকু অংশ রেলওয়ের জমি উপর পড়েছে সেই অংশ নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এমপি সেলিম ওসমান আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি উপ-শহরে একটি করে হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা উন্নীত করা হবে। দ্রুত এর টেন্ডার অনুষ্ঠিত হবে। ৫০০ শয্যা হাসপাতাল হলে আমরা মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা মোতাবেক অবশ্যই নারায়ণগঞ্জে আমরা মেডিকেল কলেজ পাবো। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর মদনগঞ্জ দিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। নবীগঞ্জ দিয়ে আমরা আরো একটি সেতু নির্মানের চেষ্টা করে আসছি। সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে আমরা ফেরী সার্ভিসের দাবী করেছি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৫ দিনের মধ্যে নবীগঞ্জ দিয়ে ফেরী চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন। হয়তো আপনারা বলতে পারেন ১৫ দিনের পরেও কেন ফেরী চালু হলো না। উনার দপ্তর ছাড়াও আরো কয়েকটি দপ্তরের কাজ রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত একটা ফলাফল পাওয়া যাবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার রাব্বি মিয়া সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর ইউনিটের কমান্ডার আব্দুল লতিফ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাসেম শকু সহ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।