সড়কে রিক্সার মিছিল !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নগর জীবন নিয়ে যানজট কোন নতুন কিছু নয়। যে কোন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নগরবাসীর হাহাকার এখন যানজট নিয়ে। আর নারায়ণগঞ্জ শহরের এই যানজট শুধু রাস্তার সমস্যা নয়, বরং এটি অনেকগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সমস্যার সামগ্রিক ফল। যার জন্য হরহামেশাই ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করে থাকে- যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাতে অবৈধ দখলে হকারদের ঢল, আইন না মেনে গাড়ি চলাচল সহ এবার অন্যতম কারণ হিসেবে যোগ হয়েছে শহরে অগনিত রিক্সা চলাচল। জনসাধারণ ও যান চলাচলের জন্যেই ব্যবহৃত হয় রাস্তা। তবে রাস্তা থাকতেও চলাচল করতে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। নগরীতে মাত্রাতিরিক্ত রিক্সার বৃদ্ধি ও অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট সহ মারাতœক র্দূঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের চাষাঢ়া হতে নগরভবন পর্যন্ত শহরের মূল সড়কের পাশে রয়েছে অভিজাত শপিং মল, বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত রেষ্টুরেন্ট, ক্লিনিক ও ডায়েগনস্টিক সেন্টার। এ সকল অভিজাত শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা ও ভবনের সামনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের গাড়ি পার্কিং করায় রাস্তার বেশির ভাগ জায়গাই দখল হয়ে থাকে। অথচ মাত্র ৫০ ফুট প্রসস্ত এই মূল সড়কে দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। এছাড়া ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই পায়ে হেঁটে চলেন নগরবাসী। ফলে যানজটের সঙ্গে আছে জনজট।

আর সড়কে জুড়ে বিস্তৃত হয়ে আছে হাজার হাজার রিক্সা। যেখানে চলাচলে সড়কের মধ্যে অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে রিক্সার যেন একটা বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায়। সড়ক জুড়ে রিক্সার এমন দৃশ্য চোখে পড়লে চলাচলকারী অনেকই সড়কে রিক্সার মিছিল চলছে বলেও মন্তব্য করে থাকেন। এরমধ্যেই শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাঢ়া থেকে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত বেশির ভাগই রিক্সা চলাচলের কারনে প্রতিদিনই লেগে থাকে তীব্র যানজট। তাই সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে নগরবাসী চাচ্ছে এর বিকল্প ব্যবস্থা। যেন রিক্সাগুলো শহরের মূল সড়কের পাশা-পাশি বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে পারে।

এ ব্যপারে ভোক্তভোগী শহরবাসী জানায়, রিক্সার পরিমান যেভাবে বেড়ে চলছে, নগরবাসীর ভোগান্তী আরও বাড়ছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, রিক্সা বাড়লেও কমছেনা যাত্রী হয়রানী ও রিক্সা ভাড়া। আর এই নিয়ে নীতি র্নিধারকদের কোনও ধরা, বাধা নিয়ম না থাকায় প্রতিনিয়তই লাঞ্ছিত হচ্ছে যাত্রী কিংবা রিক্সা চালক। ঘটে যাচ্ছে রক্তাক্ত জখম ও গুরুতর আহত সহ নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিভিন্ন উপজেলা, থানা, ই্উনিয়ন পর্যায়ের রিক্সাগুলো নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়ছে শহরে। যার কারণে সল্প আয়তনের ব্যস্ত সড়কের শহর হয়ে পড়ছে অচল। এর ফলে কর্মব্যস্ত মানুষের হারাতে হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের মূল্যবান কর্মঘন্টা।

শহরে বসবাসকারী ভোক্তভোগীরা আরও জানায়, চলাচলের জনই সড়ক তবে সে সড়কই যদি হয় অচল, এতে আর কি করার থাকে। চাষাড়া রেল লাইন থেকে শুরু করে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত রেল লাইনের পাশের যে রাস্তা রয়েছে, তা চলাচল যোগ্য করে দেয়া হউক। এতে শহরের যানজটের দূর্ভোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে শহরবাসী। যেমন শহরের জামতলা, অক্টোঅফিস এলাকায় সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে তোলারাম কলেজ রোড পর্যন্ত বিকল্প রাস্তাটি করা হয়েছে। তেমনি ভাবে এখানেও এমন একটি রাস্তা করা হোক। যেন সকল রিক্সা চাষাঢ়া থেকে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে। এতে মূল সড়কে রিক্সার চাপ অনেকটাই কমে যাবে। আর যানজট কমাতে রিক্সা চলাচলের উপযোগী করা জরুরী।

তথ্যমতে, ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে প্রতি বছরই গড়ে কয়েক হাজার করে রিক্সা নিবন্ধিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তবে, ২০০৮-০৯ সাল থেকে বৃদ্ধির এ হার কিছুটা কমতে শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নিবন্ধিত রিক্সার সংখ্যা ১০ হাজার এরও বেশী। কিন্তু থেমে থাকেনি রিক্সার বৃদ্ধি। ইতিহাস আর সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ বাহনটি, ৯০ এর দশকেই ছাড়িয়েছে নির্ধারিত সংখ্যা। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও, আনুমানিক নিবন্ধনের চেয়ে নগরে চলা দ্বিগুণের বেশি রিক্সা যানজট তৈরির একটি বড় কারণ। যদিও বাস রুটের বাইরে সংকীর্ণ সড়ক এবং অলিগলিতে চলাচলের জন্য এ বাহনই একমাত্র উপায় নগরবাসীর।

এ বিষয়ে নাগরিক বিশ্লেষকরা মতব্যক্ত করেন, রিক্সা নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে। অবৈধভাবে রিক্সা দিন দিন যেভাবে বেড়ে চলছে সেসব জায়গার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তের জন্য নয়। নারায়ণগঞ্জ শহরে যে পরিমাণে নিবন্ধনকৃত রিক্সা রয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি রয়েছে নিবন্ধনহীন রিক্সা। এই রিক্সাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি যোগাযোগ কাঠামো তৈরি করতে হলে, সবার আগে প্রয়োজন যন্ত্রচালিত এবং যন্ত্রহীন যে যানবাহন রয়েছে, তাদের জন্য পৃথক লেন এর র্কাযকর ব্যবস্থা নেয়া।

এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এফ.এম এহতেশামূল হক বলেন, আমরা নগরীকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমার জানামতে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক রিক্সা নিবন্ধিত রয়েছে। এবং আমরা অবৈধভাবে রিক্সা চলাচলে যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে এগুলো রোধে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। তবে যেহেতু বিষয়টি অবগত করেছেন খুব শিঘ্রই এ বিষয়ে আমরা একটি যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।

add-content

আরও খবর

পঠিত