নারায়নগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নগর সংবাদদাতা ) : নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন বিগত কয়েকদিন যাবৎ মাদক নির্মূলে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে সফল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তবে সদর থানা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে শহরের জল্লারপাড়া এলাকায় একটি মহল এখনো বহাল তবিয়তে। উল্লেখিত এলাকায় মাদক ব্যাবসায়ী নুরে আলম সিদ্দিক সাবু স্থানীয় ক্ষমতাধর প্রভাবশালীদের নাম ব্যাবহার করে জমজমাট মাদক ব্যাবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
জানা গেছে, সাবু তার শ্বশুড় কালু মিয়ার নগরীর আমহাট্টা জল্লারপাড়া এলাকার ১৩০নং হোল্ডিং এর বাসার ২য় তলায় টিনসেড ঘরে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই পরিচালনা করছে তার মাদক ব্যাবসা। শুধু তাই নয় মাদক ব্যাবসা পরিচালনার জন্য পুলিশের গতিবিধির ওপর নজরদারী রাখতে সাবু ওই টিনসেড ঘরের আশেপাশে ৪টি সি.সি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে।
এলাকাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাবু দীর্ঘদিন ধরে সমাজ বিধ্বংসী নেশা ইয়াবা ও ফেন্সিডিল ব্যবসার আধিপত্য জুড়ে বসলেও তা দমনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের কোন হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। পুলিশের দৃষ্টিহীণতার কারণে সাবু তার মাদকের ব্যবসা রমরমা করে তুলেছে। বিনা বাধায় তার এই ব্যবসার ফলে এলাকার তরুন ও যুব সমাজ ধ্বংসলীলায় অবতীর্ণ হতে চলেছে।
স্থানীয় অনেকে মন্তব্য করে বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকার ভাড়া বাসায় কি এমন নিরাপত্তা প্রয়োজন যার কারনে সাবু তার বাড়ির সামনে ৪টি সি.সি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে। বর্তমানে সাবু অনেকটা আত্মগোপনে থেকে সি.সি ক্যামেরার মাধ্যমে তার সহযোগী ওয়ালিদ ও রানাকে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে জমজমাট মাদক ব্যাবসা। সাবুর মাদক ব্যাবসা সহ বিভিন্ন অপকর্মে গোটা জল্লারপাড়বাসী অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তার ভয়ানক কবল থেকে এলাকার তরুন ও যুব সমাজ রক্ষার্থে প্রশাসনের উর্দ্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ অত্যাবশ্যক বলে মনে করছেন ওই এলাকার সচেতন মহল ।
কে এই নূরে আলম সিদ্দিক সাবু-
২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২নং বাবুরাইল এলাকার আলমাস সর্দার এর ছেলে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত চিহ্নিত সন্ত্রাসী আহাদ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো এই নূরে আলম সিদ্দিক সাবু। আহাদ যেদিন র্যাবের হাতে ধরা পড়ে ঐ একই দিন জল্লারপাড়া মসজিদের সামনে অবস্থিত একটি চায়ের দোকান থেকে ৬১ পিস ৬.৫ পিস্তলের গুলিসহ গ্রেপ্তার হয় সাবু। পরে অর্থের বিনিময়ে সাবু প্রানে বেঁচে গেলেও নিহত হয় আহাদ। এরপর প্রায় তিনবছর টাঙ্গাইলে গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকার পর নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসে আবারো শুরু করে অস্ত্র ও মাদক ব্যাবসা। সেসময় সাবুর মাদকের সেলসম্যান ছিলো মন্ডলপাড়া এলাকার সুমন, র্যালী বাগান এলাকার কাজল, ২নং বাবুরাইল এলাকার মোক্তার সিং ও জাহাঙ্গির, জিমখানা এলাকার রাব্বি, পাইকপাড়া এলাকার রাজীব, জল্লার পাড়া এলাকার হাবীব।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার দলের কিছু ক্ষমতাসীন ব্যাক্তিকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যেতে থাকে তার মাদক ব্যাবসা। ২০১০ সালে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় অবস্থিত বর্ষন সুপার মার্কেট থেকে পূনরায় র্যাবের তৎকালীন মেজর ফেরদৌস এর নেতৃত্বাধীন একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে সাবু ও তার সহযোগী জাহাঙ্গিরকে। তখন সাবুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি ৬.৫ পস্তিল উদ্ধার করে র্যাব। পরবর্তীতে জেল থেকে বের হয়ে পাইকপাড়া এলাকায় বসবাস করা শুরু করে সেখানেও মাদক ব্যাবসা শুরু করে সাবু। পাইকপাড়া এলাকায় মাদক ব্যাবসা করাকালীন ৬৫০ বোতল ফেন্সিডিল সহ খান সাহেব এম ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে আবারো গ্রেপ্তার হয় সাবু।