নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: বহুল আলোচিত অধ্যায় নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন ঘটনার মামলায় ২৬ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ন্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে প্রধান আসামি নূর হোসেন, কর্নেল সাঈদ, মেজর আরিফ, মেজর রানার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ছাড়াও যাবজ্জীবনসহ ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড আদেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার ১৬ জানুয়ারী সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন র্যাবের সদস্য। মামলার শুরু থেকেই র্যাবের সাবেক ৮ সদস্যসহ ১২ আসামি পলাতক। দুইটি মামলার ঘটনা এবং আসামি একই হওয়ায় দুইটিকে একটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে বলে রায় ঘোষণার সময় বলেন বিচারক।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান, উচ্চ আদালতেও যেন এই রায় বহাল থাকে। বিচার ব্যবস্থা এরকমই হওয়া উচিত। তাহলে যে কোন খুনি আর খুন করতে সাহস পাবে না। রায়ের পর নিজ পরিবারসহ বাকি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানও এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সুষ্ঠু নিরেপক্ষ বিচার সব সময়ই বহাল থাকবে এটাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই রায়টি নারায়ণগঞ্জে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।বাদীপক্ষ এরই মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার পেয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতি দাবি থাকবে রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য। এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এই রায় বহাল থাকবে আশা করি।
রায় ঘোষণার পরই আদালতে উপস্থিত নূর হোসেনসহ অন্যান্য আসামিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে উপস্থিত জনগণও এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে রায় কার্যকর এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের নৃশংস ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণসহ পুরো শহরেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার আইনজীবী ও গণমাধ্যমের কোনো গাড়িও আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে, সকাল সাড়ে ৭টায় কাশিমপুর কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ৯ টা ৩০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয় আসামীদের।
সাত খুনের মামলায় মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর। কারাগারে থাকা বাকি আসামিরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)। পলাতক আসামিরা হলেন করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত বাকিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।