নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (স্টাফ রিপোর্টার) : নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দিন দিন বাড়ছে সেবা গ্রহীতাদের র্দীঘ লাইন। যা ভেতর থেকে শুরু হয়ে ঠেকেছে অফিসের মূল গেইটের শেষ সীমানা পর্যন্ত। এদের বেশীর ভাগই পাসপোর্ট আবেদনকারী। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে সেবা গ্রহীতা বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি সেবার মান। তাই শত শত পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদন জমা নেওয়ার জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ২ জন। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী এবং তাদের স্বজনরা। ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেবা গ্রহীতাদের অনেককেই ক্ষুব্দ আচরণ করতেও দেখা গেছে।
সরেজমিনে পরির্দশনকালে দেখা যায়, সকাল ৯টার আগ থেকেই শুরু হয় লাইন । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রৌদের মধ্যে সেবাগ্রহীতাদের অপেক্ষাও বাড়তে থাকে। কিন্তু অপেক্ষমাণ সেবাগ্রহীতারা বসা তো দূরের কথা ঠিকঠাক দাঁড়ানোরও যেন জায়গা নেই। প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে অফিসের ভেতর ঢুকলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ, ভুল সংশোধন, পুলিশ ভেরিফিকেশন, নথি সংরক্ষন সবগুলো রুমের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। রোহিঙ্গা যাচাই করার জন্য মাত্র দুইজন কর্মচারী আছেন যারা প্রতিদিন প্রায় ২০০০ লোকের সেবা প্রদান করে থাকে। যার ফলে গ্রাহকদের ঘন্টার পর ঘন্টা রৌদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হয়। যদিও অল্প কিছু চেয়ার রয়েছে, তবে তা দিয়ে সামাল দেয়া কষ্টকর।
এছাড়াও পাসপোর্ট ডেলিভারী কক্ষের সামনেও দেখা যায় আরেক চিত্র। সেখানে পাসপোর্ট ডেলিভারী করার জন্য আছে মাত্র তিন জন ব্যক্তি। কিন্তু সেবা গ্রহীতাদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে মাঝে মধ্যে আনসার সদস্যদেরকেই বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট ডেলিভারীর কাজও সামাল দিতে হয়। তারপরেও অনেক সেবা গ্রহীতারাই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও অনিশ্চিত যে কাঙ্খিত পাসপোর্ট আজকে পাবেন কি না। সেটা নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তাই সরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি প্রতিষ্ঠানে সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ আগত সেবা প্রার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ষাট বছর বয়সী মো. সামছুল করিম নামে এক সেবাগ্রহীতার সাথে। তিনি জানান, পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য আমি তিন ঘন্টা যাবত এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এতো মানুষ যে অন্তত একটু বসার জায়গাটাও পাইনা। এতো মানুষ সেবা নিতে আসে কিন্তু সে হিসেবে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন কম। তাই অপেক্ষার প্রহর আর কাটেনা।
এদিকে কারো কারো দেখা যাচ্ছে, পুরনো পাসপোর্টের নামের সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম মিলছে না। জন্ম তারিখের তারতম্য ঘটছে। এ নিয়েও অনেককেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ আছেন, লেখাপড়াও জানেননা। তাদের জন্য যেন মহা বিপদ।
ভুক্তভোগী বিদেশ ফেরত রিফাত নামে একজন জানায়, আমি পাসপোর্ট পুণরায় করতে আসছি। এখানকার নিয়ম আমার জানা নাই। আমার আগের পাসপোর্টে ছোট্ট একটা ভুল ছিলো। পরে আমি রোহিঙ্গা যাচাইয়ের জন্য গেলে তখন সব কাগজ গুলো দেখে বলে তিনতলা ৩০৬ নাম্বার রুমে যান।তারপর সেখানে যাওয়ার পর এক ম্যাডাম ছিলো তাকে কাগজ গুলো দেখাতেই তিনি আমাকে একটা অঙ্গিকার নামা দিয়ে বললো এটা পূরণ করে ১০১ নাম্বার কক্ষে জমা দেন। এই যে কাগজটা যদি ঐ রুম থেকে প্রথমেই দিয়ে দিতো তাহলে সময়গুলো নষ্ট হতো না।
তিনি জানান, দেশ ডিজিটালের পথে এগুচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের সিস্টেম এখনো ম্যানুয়ালী চলছে। এরপর ছবি তুলতে গিয়ে পড়লাম আরেক বিপদে! আমার যে ছোট্ট সমস্যা ছিলো সেটা ম্যাডামকে বললাম (যিনি ছবি তুলেন) বলা মাত্রই আমাকে ধমক দিয়ে বললো নতুন করে ফরম পূরণ করে নিয়ে আসেন। তারপর আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে আসার পর নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বললেন, আমি এখানে পাসপোর্টের জন্য এসেছি, কোনো দুর্যোগের ত্রাণ নিতে আসিনি। টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। আমাদের ভুল থাকতেই পারে। তারপরেও তাদের ধমক আমরা কামনা করি না।
এরপর ভবনের দুইতলায় ২০১ নাম্বার কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক পাসপোর্ট আবেদনকারীর স্বজন এইদিক সেদিক ছোটছুটি করছে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মা হার্টের রোগী। লাইনে দাঁড়িয়ে সব কাজ শেষ করা সম্ভব না। তাই বড় স্যারের কাছে আসছি অনুমতি নিতে যাতে আমাদের কাজটা তাড়াতাড়ি করে দেয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান জানান, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের উর্ধŸতন স্যারদের জানানো হয়েছে বিষয়টি সমাধানে কাজ চলমান আছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি, সকলকে সেবা দিয়ে যেতে।