নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : রুবেল চৌধুরী, বুলবুল আহম্মেদ রুবেল! টি সম্পাদক, গোয়েঙ্গা রুবেল। বিভিন্ন নামে ও পরিচয়ে তাকে এই শহরে অনেকেই চিনে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের সাথে তার অনেকটাই ঠাট্টা-দুষ্টুমীর সম্পর্ক ছিল। সেই রুবেল এখন চলাচলে পুরোপুরি অক্ষম। পাশে নেই পরিবার কিংবা দূরসম্পর্কের স্বজনরাও। তাই হাসপতাল থেকেও রিলিজ করে দেয়া হয়েছে। ট্রলিতে উঠার পর হাত জোড় করে এটুকুই বলছে ভুল করলে মাফ করবেন। আমি বাঁচতে চাই। আমারে বাচাঁন।
শুক্রবার (৪ঠা নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ ৩শত শয্যা (খানপুর) হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ্য হলে কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিয়েছে রুবেলকে। এরআগের রাতে গলাচিপা এলাকার মসজিদের সামনে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেছিল টীম খোরশেদ। পরে এ টীমের অন্যতম সদস্য মো. আনোয়ার হাসপাতালে থাকা অবস্থায় খেয়াল রাখেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পর অনেক চেষ্টার পরও তার জন্য থাকার কিংবা যত্ন নেয়ার কোন মানবিক মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর তাই সবশেষে আবারো আশ্রয়ের ঠিকানা হয়েছে সেই মসজিদের প্রাঙ্গন।
জানা গেছে, স্থানীয় একটি পত্রিকায় র্দীঘ বছর অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেছে এ রুবেল। ছেটবেলা থেকেই পরিবার ও সমাজে অবহেলীত হওয়ায় কর্ম করেই চলতো। বিভিন্ন সময় রৌদ, বৃষ্টি, ঝড়ে রাস্তা ঘাটে, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের বাসায় গিয়েও পত্রিকা বিলি করতো রুবেল। এর মাধ্যমে অনেকেই স্নেহ করে যা দিতো, সে উপার্জনের টাকায় জীবীকা নির্বাহ করতো সে। অনেক সময় তার কাছে থাকা সে টাকা ছিনিয়েও নিয়ে গেছে স্থানীয় ছিচকে সন্ত্রাসীরা। অনেকবার মারধরের শিকারও হয়েছ। তারপরেও থেমে থাকেনি রুবেল। কাজ করে মানুষকে সেবা দিয়ে রোজগার করতো। তবে আজ সে রুবেল চলাচল করেত পারেনা। শরীরে যেন হাড় ছাড়া কিছুই নাই। শুধু হতভাগ চোখে তাকিয়ে থেকে দু একটি কথা বলে আর চোখের পানি ফেলে। তবে যে যায়, সবাইকে এখনও চিনে। জিজ্ঞাসাও করে ভাই ভালো আছেন?
আরো জানা গেছে, মসজিদে ফেলে রাখার আগে সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসহায়ের মতই পড়েছিল। সেখান থেকে কারো মাধ্যমে হয়তো নিজ জেলায় এসেছে। তবে কে বা কারা তাকে এনেছে তা জানা যায়নি। রুবেল এর পরিবারের বর্তমানে কেউই নেই। তার বাবা মারা গেছে অনেক আগেই। মা ছিল সেও অন্যত্রে বিয়ে করে চলে গেছে। একমাত্র বোনের বাড়িতে মাঝে সাঝে গেলেও কিছুটা শারিরীক প্রতিবিন্ধ থাকায় সেটাও বাধ্যগত কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ। তাই সে বোনও এখন আর খোঁজ নিচ্ছেনা। এজন্য রুবেলকে দেখার মত কাউকেই এখন আর পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে, তার জন্য যাই দু-একজন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা অনুরোধ করে বলেন, রুবেলকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি। রাখার জন্য সাময়িক ব্যবস্থা হলেও তাকে খেয়াল রাখার মত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি কোন আশ্রয়কেন্দ্রে দেয়ার বা কিছুদিন হলেও তাকে দেখভাল করার কেউ থাকেন। জানাবেন। তারা আশা করছে কয়েক সপ্তাহ পর কিছুটা হলেও সুস্থ্য হয়ে যাবে রুবেল। তারজন্য ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। ওর পাশে দাড়ানোর মত যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি থাকেন সাড়া দিবেন, প্লিজ। ও এখন গলাচিপা মসজিদের সামনেই পড়ে থেকে মানবেতর সময় পার করছে। রুবেলের সহযোগীতায় পাশে দাড়ানোর জন্য মানবিক মানুষগুলোর কাছে আবেদন রইল।