নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : সমাজের সব সেক্টর মাদকের জড়িত হয়ে গেছে তাই নিজ জেলাকে বাচাঁতে হাত জোড় করে মাদক নির্মূলে পুলিশের সহযোগীতা চাইলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। মাদকের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেছেন, মাদক যে খায় তাকে আমি ঘৃণা করি না, কিন্তু তার ওপরে কষ্ট লাগে। কিন্তু যে মাদক বিক্রি করে সে তো ইবলিশ শয়তানের একটা রূপ। কারণ যে পরিবার মাদক খায় সেই পরিবারটা দোজখ হয়ে যায়। ওই পরিবারে কোনও শান্তি থাকে না। সমাজের সব সেক্টর মাদকের জড়িত হয়ে গেছে তাই আমি পুলিশের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করবো, আপনারা আমাদের নারায়ণগঞ্জটাকে বাঁচান। ২৯ অক্টোবর শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। বিশেষ অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ।
নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ার বিষয়ে এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, আমি প্রতি সপ্তাহে ২ দিন নির্বাচনি এলাকার ওসি ও ডিআই ওয়ানকে নিয়ে ভালো কাজ করার বিষয়ে কথা বলতাম। তারা রাত ১১ থেকে ১২টার সময় বাসায় আসতেন। একটা দায়িত্ব হয়ে গিয়েছিল নারায়ণগঞ্জকে ভালো করার। আমি নিজে শীতের মধ্যে শাল পরে মাদক বন্ধে মাঠে নেমেছিলাম। তখন আমাকে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করতেও গিয়েছিল। চিনতে পারেনি, যখন চাদর সরিয়েছিলাম তখন বুঝেছিল সেটা ছিলাম আমি শামীম ওসমান। আমার ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগেছিল নারায়ণগঞ্জ শহরসহ আশপাশের এলাকার মাদক বন্ধ করে দিতে।
মাদক কারবারিদের টার্গেটে পরিণত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, তৎকালীন আইজিপি সাহেব আমাকে জরুরি ভিত্তিতে আমাকে বললেন, আপনাকে মেরে ফেলবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন ? তিনি বললেন, সারা দেশের সব মাদক ব্যবসায়ী এক হয়েছে, আপনাকে হিট করবে।
অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এমপি শামীম ওসমান বলেন, আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমি যদি ছিয়ানব্বই সালের এমপি শামীম ওসমান হতাম তবে আপনাদের এভাবে বলতাম না। কারণ ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জে ফেনসিডিল ক্লাব নামে ক্লাব হয়েছিল। ওই সময় নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় ৩০ হাজার বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হতো। তৎকালীন সময়কার এসপি ও ওসি যেভাবে আমাকে সাহায্য করেছিলেন, সেজন্য আমি তাদের জন্য দোয়া করি। তারা যখন নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন তারা বলেছেন, দুটি বিষয়ে তারা আপস করবেন না, একটা হলো ড্রাগস (মাদক) এবং দ্বিতীয়টি নিষিদ্ধপল্লি। এই নিষিদ্ধপল্লিতে ৬ হাজারের ওপরে মেয়ে ছিল, যাদের বয়স ১১ বছরের নিচে। সারা বাংলাদেশের ক্রাইম কন্ট্রোল করতো এই নারায়ণগঞ্জের নিষিদ্ধপল্লি। আমরা সেটিকে উচ্ছেদ করিনি, পুনর্বাসন করেছি। এই কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা এসেছিল। এই বাধার নাম শুনলে ভয় পাবেন আপনারা। দেশে-বিদেশের এমন কোনও সেক্টর নেই যারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ওই কাজটি করে জীবনে একটা ভালো কাজ করতে পেরেছিলাম, যে কারণে বোমা হামলায় বেঁচে গেছি
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, র্যাব-১১ অধিনায়ক (সিইও) তানভীর মাহমুদ পাশা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাবেক সভাপতি ডা. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, কমিউনিটি পুলিশং জেলা কমিটির সহ সভাপতি কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, অফিস সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলার চেয়ারম্যান এড. শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী, ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন, ফতুল্লা কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি মোস্তফা কামাল, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মো. মাহাবুব রহমান বাবুল, শিপন সরকার সহ প্রমুখ।