নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : কোডিভ–১৯ মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গ্রেফতার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবিরকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। ৬ আগস্ট বৃহষ্পতিবার সকালে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফলে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত রায়হানকে রিমান্ডে থাকতে হবে।
রায়হানের আইনজীবী সুমিতা শান্তিনি কিষনা সকাল পৌনে ১০টায় জানান, বুধবার রাতেই আমরা জানতে পারি রায়হানকে আজ আদালতে হাজির করে আবারও রিমান্ড চাইবে পুলিশ। সে অনুযায়ী আমরা আদালতে হাজির হই। তবে আদালতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
সুমিতা জানান, রায়হান আগের মতোই বলেছেন যে তিনি যা দেখেছেন তাই বলেছেন। তবে মালয়েশিয়ার কাউকে আহত করা তার উদ্দেশ্যে ছিল না। রায়হানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে বুধবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া গেজেট জানায়, রায়হানের বিষয়ে যে তদন্ত চলছে সেটা শেষ করে সব নথি অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বারে (এজিসি) জমা দেওয়া হয়েছে। এজিসি সব কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর রায়হানকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ফেরত পাঠানোর পর সে আর মালয়েশিয়া আসতে পারবে না। কারণ তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এর ফলে রায়হান পরে আর কখনও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবেন না বলেও জানান দাউদ।
কবে নাগাদ ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের পরবর্তী ফ্লাইট যাবে ৩১ আগস্ট। সেই ফ্লাইটে তাকে পাঠানো হবে।
তবে মালয়েশিয়ার একাধিক বাংলাদেশি জানিয়েছে, ৩১ আগস্টের আগে ঢাকায় কুয়ালালমপুরের একাধিক ফ্লাইট রয়েছে। কিন্তু, এরপরও তাকে দেরি করে পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টা আদালতে তুলে ধরেছেন আইনজীবীরা।
এর আগে গত ৩ জুলাই আল–জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন–১০১ ইস্ট শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে দেখানো হয়েছে, কর্মহীন ও খাবারের সংকটে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের ঘর থেকে টেনে–হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আল–জাজিরার ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনে মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন রায়হান কবির। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে। ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান বলেছেন, কোভিড–১৯ চলাকালে প্রবাসীদের প্রতি যে আচরণ তিনি দেখেছেন সেটাই তিনি বলেছেন এবং এগুলো তার একান্তই নিজস্ব অনুভূতি। তবে তিনি মালয়েশিয়ার কাউকে তিনি আহত করতে চাননি।
গ্রেফতারের আগে রায়হান এক বার্তায় বলেন, আমার অপরাধটা কী? আমি তো কোনো মিথ্যা বলিনি। প্রবাসীদের ওপর যে বৈষম্য ও নিপীড়ন চলেছে, আমি শুধু সেই কথাগুলো বলেছি। আমি চাই প্রবাসে থাকা কোটি বাংলাদেশি ভালো থাকুক। আমি চাই পুরো বাংলাদেশ আমার পাশে থাকুক।
রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা–মা আর দুই ভাই–বোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে–আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদক চোরাকারবারের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন তিনি।
গত ১ আগস্ট ঈদের দিন রায়হানের মা রাশিদা বেগম জানান, আমার যন্ত্রণা আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না। সারাটা দিন আমি কেঁদেছি। আমার ছেলেটাকে আপনারা আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আমার আকুতি, আমার ছেলেটাকে ফেরত দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও আমার একই আকুতি। আমি নিশ্চিত জানি, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি।