নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নওগা, বদলগাছী প্রতিনিধি ) : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার একটি গ্রামীণ সড়ক পাকাকারণ কাজে তিন নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষযটি জানতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আলী বেগ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপার হয়েছে। খোদ উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের লোকজনের উপস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত শ্রমিকেরা সড়কে তিন নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকজনেরা এই সড়ক পাকাকরণ কাজে তিন নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহারে বাঁধা দিলে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে লোকজন ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা কেউই তাঁদের কথা শোনেননি বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
সড়কের ভিত্তিপ্রস্থর ফলকে দেখা যায়, নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সাংসদ ছলিমউদ্দিন তরফদার সেলিম গত ১ জুন সড়কটি পাকাকরণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। এ সড়কটি দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার। কাজের চুক্তি মূল্যে ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ টাকা। বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ভিত্তি ফলকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল শনিবার সকালে সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, গর্ন্ধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোড় থেকে একই গ্রামের সুধাপাড়া বাচ্চুর বাড়ির মোড় পর্যন্ত সড়কে খোয়া ফেলে রোলার করা হয়েছে। সড়কের ওপরে থাকা খোয়াগুলো নি¤œমানের ইটের। রোলার করার কারণে নি¤œমানের ইটের খোয়াগুলো ভেঙে লাল মাটির মতো আকার ধারণ করেছে। গর্ন্ধবপুর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সড়কের নিচে বেশিভাই দুই নম্বর ইটের খোয়া ও নি¤œমানের বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
পরে সড়কের উচ্চতা কম হওয়ার কারণে স্থানীয় একটি ইটভাটা থেকে তিন নম্বর ইটের খোয়া (রাবিশ) এনে সড়কে ফেলে উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে লোকজনের সামনেই তিন নম্বর ইটের খোয়াগুলো রোলার দিয়ে দেবে দেওয়ার কাজ করা হয়। তখন তাঁরা এ কাজে বাঁধা দিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের লোক ও ঠিকাদারের শ্রমিকেরা কেউই তাঁদের কোন কথা শোনেননি। এরচেয়ে সরকারি কাজ আর ভালো মানের হবে না বলে তাঁরা তাঁদের জানিয়েছেন। সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরুর পর থেকে তাঁরা উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে এই সাইডে দেখতে পাননি। নিম্নমানের কাজের কারণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন কাজটি বন্ধ রাখার জন্য বলেছিলেন।
গন্ধর্বপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম, মোঃ জহুরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, রায়হান কবীর ও আকরাম হোসেন বলেন, পুরো সড়ক জুড়ে তিন নম্বর ইটের খোয়া বিছানো হয়েছে। আমরা গ্রামবাসীরা উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের লোকের সামনে তিন নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহার করায় জন্য প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের লোক আমাদের বলেছেন সরকারি কাজ এর চেয়ে ভালো হবে না। সড়কের কাজ শুরুর পর আমরা উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে সাইডে দেখিনি। মিঠাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, পুরো সড়কটিতে তিন নম্বর ইটের খোয়া (রাবিশ) ব্যবহার করা হয়েছে। এত নিম্নমানের সড়ক উপজেলা আর কোথাও হয়নি বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আলী বেগ জানান কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান গতকাল রোববার মোবাইল ফোনে বলেন, ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য এবং নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করা হবে। জুন ক্লোজিং এর কারণে কয়েকদিন ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে ঠিকাদার নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করেছে। এলাকার লোকজন বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুকনুজ্জামান ঠিকাদারের পক্ষে নিয়ে বলেন, সড়ক পাকাকরণ কাজে ইটের রাবিশ ব্যবহার করতে হয়। তিনি এ কাজটি তদারকি করেননি। মূল ঠিকাদার কাজটি করছেন না। প্রান্ত সরকার নামে মান্দার একজন ঠিকাদার কাজটি করছেন। ঠিকাদার প্রান্ত সরকার বলেন, আমি মূল ঠিকাদার নই। যদি সড়কে তিন নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অপসারণ করে নেওয়া হবে। স্থানীয় একটি ইটভাটা থেকে কিছু খোয়া ক্রয় করা হয়েছিল সেই খোয়াগুলো একটু খারাপ হতে পারে। তবে সড়কে কাজের মান সঠিক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।