সাদ পন্থীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে ৬ দাবি, বিক্ষোভ কর্মসূচীতে যুবককে মারধর

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : টঙ্গি ইজতেমা মাঠে সাদ পন্থী লোকজনের হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ওলামা পরিষদ। সংবাদ সম্মেলন থেকে হামলার মূল হোতা ওয়াসিফুল ইসলাম, নাসিম ও ফরিদ উদ্দিন গংদের বিচারের আওতায় এনে ফাঁসি সহ ৬টি দাবী তুলে ধরেন। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, বিবৃতি দেন জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও ডি আই টি মসজিদের খতীব  আব্দুল আওয়াল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মাও.দীন ইসলাম, মাও.আব্দুল মনসুর, মাও. আব্দুল কাদির, মাও.সাব্বির হোসেন কাসেমী, মাও. আতাউল হক সরকার সহ অন্যান্যরা।

সোমবার ( ৩রা ডিসেম্বর ) ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ওইসময় হাজারো লোক প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধকালে বিক্ষুব্ধ মাওলানারা কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বক্তব্যে বলেন, সাদ পন্থীদের যদি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া না হয় আর যদি আমাদের ধৈয্যের বাঁব ভেঙে যায় তাহলে একজনকেও জীবন নিয়ে ফিরে যেতে দেবো না। সাদ পন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা শাপলা চত্বরের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা রক্ত দেওয়া সন্তান। শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছি। আমরা ১৭ লক্ষ মানুষ। আমরা যদি পথে নামি তাহলে তোমাদের পদপৃষ্ট করে বাংলাদেশ ছাড়া করতে পারবো। সরকারকে বলবো আগুন নিয়ে খেলা করবেন না।

পরে সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেন। এর মাঝে আউয়ালপন্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে মাহফুজ (২৬) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে দুই দফায় ব্যাপক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১২টার দিকে চাঁনমারীতে অবস্থিত বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আব্দুল আউয়াল অনুসারী পক্ষটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় চাঁনমারী এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধি যুবক মাহফুজ ছুরি হাতে মিছিলের দিকে আসলে মিছিলরত মুসুল্লীরা যুবকের হাত থেকে ছুরি ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এরপর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে ওই যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। কিছুক্ষন পর উত্তেজিত মুসুল্লীরা পুলিশ ভ্যান থেকে ওই যুবককে বের করে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে। এ অবস্থায় ওই যুবকের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়া ছিল। মারধরের এই দফায় পুলিশ নিভৃত করার চেষ্টা করলে পুলিশের উপরও চড়াও হয় মুসুল্লীরা। এ সময় পুলিশের উপরও কিলঘুষি মারতে থাকে বিক্ষোভরত সাদবিরোধী আউয়াল অনুসারীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ উত্তেজিত মুসুল্লীদের নিভৃত করে প্রতিবন্ধি যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ ভ্যানে তুলে খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহফুজ চাঁনমারীর মাউরাপট্টি এলাকার মৃত হাশেমের ছেলে। মানসিক প্রতিবন্ধি যুবক মাহফুজের মা ভানু বলেন, মাহফুজ ছোটবেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধি। ওর হাতে সবসময়ই একটা ছুরি থাকে। তবে ও কাউকে কোন আঘাত করে না। ছেলেকে মারধরের কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন মাহফুজের মা ভানু। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলেও মাহফুজের ব্যাপারে সত্যতা জানা যায়। এলাকাবাসীদের মধ্যে অনেকেই বলেন, মাহফুজ ছোটবেলা থেকেই এমন। ওর হাতে প্রায় সময় একটা ছুরি থাকে। কিন্তু কখনো কাউকে আঘাত করে না সে।

এদিকে সাদ বিরোধীদের সড়কে এমন অবস্থানে নগরীজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। তাদেও ৬ দফা দাবী গুলো হল হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিম গংদের সহ হামলার সাথে জড়িত সকলকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, টঙ্গি ময়দান এতদিন যেভাবে শুরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথী ও ওলামায়ে কেরামের অধীনে ছিল তাদের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে, অতিসত্তর কাকরাইলের সকল কার্যকলাপ হতে ওয়াসিফ ও নাসিম গংকে বহিস্কার করতে হবে, সারা দেশে ওলামায়ে কেরাম ও শুরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথীদের উপর হামলা মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে ও টঙ্গির আগামী এজতেমা যথাসময়ে পূর্ব ঘোষিত ( ১৮,১৯,২০ প্রথম ধাপ ও ২৫,২৬, ২৭ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে দ্বিতীয় ধাপ) অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ১ ডিসেম্বর গাজীপুর  টঙ্গি ইজতেমার ময়দানে মাওলানা সাদ পন্থিদের ৫ দিনের জোর হওয়ার কথা ছিলো। যেখানে মাওলানা জোবায়ের পন্থী লোকজনেরা পূর্বে থেকেই অবস্থান নিচ্ছিল। একপর্যায়ে দুইপক্ষের সাথে বাকবিতন্ডা শেষে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে শতাধিক লোক আহত হয়। জানা গেছে, সাদপন্থীদের জোর শেষে আগামী৭-১১ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার টঙ্গী ময়দানে জুবায়ের পন্থীদের পাঁচ দিনের জোর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ হামলায় ১১২০ জনের মত আহত হন, এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত হন। ২১০ জন হাসপতালে আছে। নারায়ণগঞ্জের  ৫ জন মাদরাসার ছাত্র নিখোঁজ আছে, যাদের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

add-content

আরও খবর

পঠিত