সংগঠনের নামে প্রতারণায় তৎপর মানবাধিকার কর্মী ও কথিত সাংবাদিক

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : বিভিন্ন এলাকায় দৃশ্যমান ঝুলানো থাকে মানবাধিকার সংগঠনের সাইনবোর্ড। হাঁটতে গেলেও ডানে-বামে, আগে-পিছে চোখে পড়ে মানবধিকার নেতা। পোশাকে-আশাকেও স্মার্ট বোঝানোর চেষ্টা করে এরা। ফিতায় বেধে গলায় ঝুলিয়ে রাখে পরিচিতি কার্ড। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে, চোখের রাঙ্গা চশমা খুলে, গলা উচিয়ে পরিচয় দেয়, আমি মানবিধকার নেতা। তবে, সচেতন মহল ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এদের অধিকাংশই টাউট।

সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে বহুমুখী প্রতারণার মূলহোতা প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ ও তার সহযোগী মো. আনিসুর রহমান। যাদের অন্যকোন পরিচয় না থাকলেও প্রধান পরিচয় ছিল তারা মানবাধিকার কর্মী। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নাম সর্বস্ব পত্রিকা ও তালাশ নিউজ টিভি ৭৯ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে পরিচয় প্রদান করে প্রতিনিধি নিয়োগ দিতেন। এছাড়াও  ট্রাফিক পুলিশ ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চাকুরীর আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তাদের অন্যতম কাজ।

কিন্তু আলোচনায় এসেছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ওই ২ জন সদস্য গ্রেফতার হলেও জেলায় এমন অসংখ্য প্রতারক এখনো অধরা রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় সংগঠনের নাম করে কখনো মানবাধিকার কর্মী আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী, চাঁদাবাজী, প্রতারণাসহ নানা অপকর্ম করছে। এছাড়াও সংগঠনের নাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অর্থ বানিজ্য আদায়ের মাধ্যমে দিচ্ছে সম্মাননা ক্রেস্ট।

এ প্রসঙ্গে বোদ্ধা মহলের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এসব কথিত মানাবধিকার কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে টার্গেট করে পকেট ভারি করার ধান্দায় থাকে। তাদের কেউ কেউ সারাদিনই বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ায়। শখ্যতা রাখে প্রশাসনিক কর্মর্কতাদের সাথেও। বিভিন্ন সময় এদের অনেকই আবার শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট নিতেও দেখা গেছে। আবার সংগঠনের ব্যানারে অনেক সময়ই প্রদান করে সহযোগীতার নানা উপকরণ। অথচ তাদের উপার্জন নিয়েই রয়েছে নানা প্রশ্ন।

এদিকে মাঝে মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে এসকল মানবাধিকার কর্মী নামধারী অখ্যাত পত্রিকার কথিত সাংবাদিকদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পাকড়াও করে থাকেন। এদের নামে মামলাও হচ্ছে অহরহ। তারপরও জেলার প্রতিটি থানা ও উপজেলা অফিসে এসকল অপকর্ম হোতাদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। এজন্য প্রতিটি সংগঠনকে গোয়েন্দা সংস্থ্যার কঠোর তদারকী সহ প্রশাসনের অভিযান পরিচালনায় ধারাবাহিকতা চান ভুক্তভোগী ও জনসাধারণ।

প্রসঙ্গত, নামে বেনামে গড়ে উঠা এসব কথিত সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীদের অর্থ বানিজ্য ও প্রতারণার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এরআগেও নারায়ণগঞ্জে দারিদ্র বিমোচন ও সমাজ সেবার নামে প্রতারণাসহ বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভুয়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান নূর রাকিবকে জামতলা এলাকা থেকে আটক করেছিল র‌্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার নথিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া চেক-রশিদের ফটোকপি, অর্ধশত অবৈধ পাসপোর্ট, একটি টেলিস্কোপ, বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ইতালির তৈরি একটি অত্যাধুনিক খেলনা পিস্তল এবং একটি ধারালো ছুরি জব্দ করা হয়।

এছাড়াও একজন হত্যা মামলার আসামিও জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ নামে এক ব্যাক্তি দীর্ঘদিন যাবত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিলো। আর তাকে এ কাজে সহযোগীতা করতো তারই স্ত্রী দৌলেতুন নেছা। তাদেরকেও গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় এ প্রতারকদের কাছে উদ্ধার হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীলসহ নানা কাগজ।

add-content

আরও খবর

পঠিত