শ্রম আইন মানতে নারায়ণগঞ্জের দোকান-মালিকদের অনিহা !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে রক্তচোষা জোগের ন্যায় শ্রমিকদের ছুটির দিনেও কাজ করিয়ে নিছেন মালিক পক্ষের বাবু সাহেবরা। অথচ শ্রম আইনের ধারা মোতাবেক শুক্রবার সহ সাপ্তাহিক ছুটি দেড়দিন বন্ধ ও ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে দফায় দফায় শ্রমিকরা রাজপথে বিক্ষোভ করলেও, এতো কোন কর্ণপাত করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দাবিতে উল্লেখ রয়েছে, ১। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৫ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। ২। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ৬ মোতাবেক প্রত্যেক মালিক তাহার নিজস্ব খরচে নিয়োজিত শ্রমিকের জন্য সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ৯ মোতাবেক সকল শ্রমিকদের জন্য একটি রেজিষ্টার রাখতে হবে। ৪। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ৫৮ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি সরবরাহের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা করতে হবে। ৫। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১০০ মোতাবেক দৈনিক ৮ (আট) ঘন্টা কাজের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। অধিক কাজের জন্য বর্ণিত আইনের ১০৮ ধারা মোতাবেক দ্বিগুন হারে ভাতা দিতে হবে। ৬। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১১৪ মোতাবেক প্রত্যেক দোকান প্রতিষ্ঠান প্রতি সপ্তাহে অন্তত দেড়দিন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।

এক্ষেত্রে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপণ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ৭। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১১৫ মোতাবেক অসুস্থ্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রতি পঞ্জিকা বর্ষপূর্ণ মজুরীতে ১০ (দশ) দিনের নৈমিত্তিক ছুটি দিতে হবে। ৮। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১১৬ মোতাবেক অসুস্থ্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রতি পঞ্জিকা বর্ষে পর্ণ। মজুরীতে ১৪ (চৌদ্দ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি দিতে হবে। ৯। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১১৭ মোতাবেক চাকরীর মেয়াদকাল ০১ (এক) বৎসর পূর্ণ হওয়া পর বর্ণিত আইন মোতাবেক বাৎ্সরিক ছুটি দিতে হবে। ১০। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১১৮ মোতাবেক প্রত্যেক শ্রমিককে ঐ ১১৮ মোতাবেক প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতি পঞ্জিকা বর্ষের ১১ (এগার) দিনের মজুরীসহ উৎসব ছুটি প্রদান ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতে হবে। ১১। বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন বৃদ্ধি। ১২। শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের জন্য খেলাধুলা ও সাগতিক প্রতিযোগিতার আলো ১৩। দূর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

এদিকে, শ্রমিকদের ন্যায দাবি আদায়ের লক্ষে নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিত ভাবে এই বিষয় অবগত করলেও এর পরিবর্তনের কোন বালাই নেই।

এ বিষয় নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোজ্জামেল হক ও সাধারণ সম্পাদক তুলসি ঘোষ বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে বহুবার ডিসি ও শ্রম অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে তবুও এর কোন সমাধান হচ্ছে না।

আমরা সরেজমিনে ৮ জানুয়ারি শুক্রবার বন্ধের দিনে নগরীর কালিবাজারস্থ শ্রীগুরু বস্ত্রালয়, চন্দ্রন বস্ত্রালয়, রামগতি বস্ত্রালয়, রামকানাই বস্ত্রালয়, মা কমপ্লেক্স মার্কেট, তন্নীমা বস্ত্র বিতান, নবরুপা বস্ত্র বিতান, রিয়া বস্ত্রালয়, ফ্রেন্ড মার্কেট পপুলার ক্লথ ষ্টোর, রিতু বস্ত্রালয়, মেঘলা বস্ত্রালয়, শুভেচ্ছা, আলি ক্লথ ষ্টোর, হাজী হোসেন মোল্লা এন্টার প্রাইজ, সোনালী বস্ত্রালয়, পপি এন্টার প্রাইজ, জোৎনা এন্টার প্রাইজ, স্বপ্ন বস্ত্র বিতান, রুপা ক্লথ ষ্টোর, গলাচিপা সংলগ্ন বিবো, স্যামসাং মোবাইল মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের মিনিষ্টার, ডায়মন্ড রিং গিফট শপ, রিভারভিউ মার্কেটের অধিকাংশ দোকান, ডিআইট এলাকার  বৌরানী শাড়ী বিতান, মা শাড়ী বিতান, আহাদ সুজ, রাজধানী শাড়ী বিতান সহ আরো অনেক মার্কেটের প্রতিষ্ঠান খোলা দেখেছি এটা খুবই দু:খজনক।

তিনি আরও বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হয় দুর্বলতা রয়েছে নতুবা কিভাবে মালিকপক্ষ শুক্রবারসহ সাপ্তাহিক ছুটি দেড়দিন বন্ধ ও ১৩ দফা দাবি মানছে না। আমার ধারণা শসের মধ্যে ভুত আছে, যেটাকে তারাতে হবে। আমি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিক পক্ষের কাছে আহবান করবো। সাপ্তাহিক ছুটি দেড়দিন বন্ধ ও ১৩ দফা দাবি মেনে শ্রমিকদের ন্যায চাওয়া পুরন করুন।

এ বিষয় সহকারী উপ-মহাপরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, ভাই এ বিষয় আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আমাদের টিম আইন মোতাবেক কাজ করছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত