নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : অবশেষে স্কুল ছাত্র ওয়াজিদ (১২) কে নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইল এলাকায় ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে শ্বাসরুদ্ধকর সাড়ে ৪৭ ঘন্টার অভিযান শেষে উদ্ধার করা হয় । তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ২টায় প্রথমে ওয়াজিদের মরদেহটি ধসে পড়া ভবনের নিচে সনাক্ত করা হয়। মরদেহটি সনাক্ত করার এক ঘন্টারও বেশি সময় পর লাশটি সাড়ে ৩ টায় ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে তুলে আনা হয়। ভবনের নিচে চাপা পড়ায় এ সময় ওয়াজিদের মরদেহটি মুখমন্ডল থেঁতলে যায় ও পরো শরীর পচন ধরে যায়। ওয়াজিদের লাশ উদ্ধারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান শেষ করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
ওয়াজিদের মরদেহটি উদ্ধারের পর ওয়াজিদের বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ওই সময় ঘটনাস্থলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহত ওয়াজেদ ওই এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। গত ৩ নভেম্বর রবিবার বিকালে ভবনটি ধসে পড়লে তাৎক্ষণিক মারা যায় ওয়াজিদের খালাত ভাই সোয়েব। সোয়েব ও ওয়াজিদ সমবয়সী এবং স্থানীয় সানরাইজ কিন্ডার গার্টেনের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।
এদিকে ওই ঘটনায় নিহত সোয়েবের মামা মোঃ রনি বাদি হয়ে মঙ্গলবার ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে ওই বাড়ির মালিক, জেবুন্নেচ্ছা, বাবু, শিউলি, আজাহার হোসেন ও সুমনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন। আসামীরা সম্পর্কে একে অপরের ভাই বোন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারি পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ঘটনার পর থেকে শিশু ওয়াজিদ নিখোঁজ ছিল। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শিশুটির অবস্থান নিশ্চিত হয়। শিশুটি ধসে পড়া ভবনের নিচতলার একটি পিলারের নিচে চাপা পড়ে ছিল। লাশ উদ্ধার করে শিশুটির পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই উদ্ধার অভিযান শেষ ঘোষণা করা হয়। নিখোঁজ শিশুটির মরদেহটি উদ্ধার আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ নভেম্বর রবিবার বিকালে হঠাৎ করেই নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল শেষ মাথায় কেউট্টার বাড়ি (বড় বাড়ি) এলাকায় এইচএম ম্যানশন নামে ৪ তলা ভবনটি ধসে পড়ে। ঘটনার দিন সোয়েব নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় ৪ জন। নিখোঁজ ছিল অপর স্কুল শিক্ষার্থী ওয়াজিদ।
স্থানীয়রা জানায়, বাবুরাইল এলাকাতে ওই ভবনটি মৃত রউফ মিয়ার চার সন্তান মিলে ভবনটি নির্মাণ করে। ভবনটি নির্মাণ করা হয় একটি খালের উপর। ভবন নির্মাণে আগে ঠিকমত পাইলিং করা হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয়রা আগেই ভবন মালিককে সর্তক করেছিলেন কিন্তু তারা তা শুনে নেই । তাই বিকালে ভবনটি ধসে পড়ে যায়।
এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেহেনা আক্তারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।