শেখ হাসিনা ছাড়া চিন্তা করলে হারাতে হবে অনেক কিছু : সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, যে যতই লাফালাফি করেন, অনেকের অনেক চাহিদা থাকতে পারে, শেখ হাসিনা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সহ বাংলাদেশের মানুষ যদি  অন্য কিছু চিন্তা করেন তাহলে জীবনে অনেক কিছু হারাবেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্দেশনা দিয়ে ছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর জয়বাংলা বলতে পারি নাই। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের যতটুকু উন্নয়নই হয়েছে মানুষের মনে আশা জেগেছে আবারো প্রাচ্যেরডান্ডির পুরনো রূপ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

রোববার (২ সেপ্টেম্বর) শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত শ্রী শ্রী রামসীতা মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে জন্মাষ্টমী উদযপান পরিষদের পক্ষ থেকে বেদখল হয়ে যাওয়া দেত্তোরসম্পত্তি দেওভোগ জিউস পুকুর ও মাসদাইর শ্মশানের জমি দখলমুক্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে সংদস সদস্য সেলিম ওসমান ও জেলা প্রশাসক রাব্বি মিঞার কাছে দাবী উত্থাপন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঝে ভেদাভেদের কথা বলা হয়। কিন্তু ভেদাভেদ করার কি আছে? আমাদের মুসলিম ধর্মে অন্যদের ধর্ম সম্পর্কে জানতে বলা আছে। আমরা যারা আরবি জানি না তারা বাংলায় পবিত্র কোরান শরীফ পাঠ করি। পবিত্র কোরান শরীফ বাংলায় অনুবাদ করেছেন গিরীশ চন্দ্র সেন। তাহলে কেন আমাদের মাঝে এতো ভেদাভেদের কথা বলা হয়।

পরিপ্রেক্ষিতে জিউস পুকুর বেদখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সেলিম ওসমান বলেন, আমি বলতে গেলে গিফত হবে। এই কাজটি কিন্তু আমাদের না। কাজটি আমাদের সিটি কর্পোরেশনের। এই জিউস পুকুরটি বেদখল হয়ে যাবে এটা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। আমরা নারায়ণগঞ্জে আজব আজব জিনিস দেখছি। যে জায়গা ভরাট করা হলো আবার সেই জায়গাকে খনন করা হচ্ছে। জায়গা কার রেলওয়ের। আমরা হতভাগ হয়ে যাই। এই এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়েও এলাকার মানুষের ভালবাসা পেয়েও আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না শুধুমাত্র আইনী বাঁধার কারনে। আমরা দেখতে পেলাম, মর্গ্যাণ স্কুলের একটি অংশ বিনা নোটিশে ভেঙ্গে দখল করে নেওয়া হয়। কোন কোন মসজিদ হুমকির মুখে রয়েছে যেকোন সময় সিটি কর্পোরেশন থেকে ভেঙ্গে দেওয়া হবে।

এমন কোন সমস্যা উপরওয়ালা সৃষ্টি করেন নাই যেটা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায়না। নারায়ণগঞ্জে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে প্রত্যেকটা উন্নয়ন আলোচনা আর সকলের সহযোগীতায় হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ আপনাদের জনগনের কথা ভাবতে হবে। কেন জনগন ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারবে না, কেন রাস্তার দুপাশে ময়লা পড়ে থাকবে? আমি কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে বলতে চাই। শুধু বলবো আপনি বসেন। আবার যদি বেশি বসতে বলি তাহলে অনেকেই বলবে সামনে নির্বাচন তাই আমি বুঝি সমর্থনের জন্য বসার কথা বলছি। বসার সময় মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের পর বসার আর কোন সুযোগ নাই।

হিন্দুদের তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দের  উন্নয়ন এবং মাসদাইর শ্মশানের জমি দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খোকন সাহা বলেছিলে লাঙ্গলের ভার নাকি আর সইতে পারছে না। লাঙ্গলবন্দে যেতে পারেন আর লাঙ্গলের ভার সইতে পারেন না তা কি হয়। এই লাঙ্গলবন্দে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে। খোকন সাহা সহ হিন্দু নেতৃবৃন্দরাই আমাকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা করেছেন। আমি খোকন সাহার উপর দায়িত্ব রইলো খুঁজে বের করেন কে শ্মশানের জমি দখল করেছে। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কোন ভেদাভেদ থাকবে না নারায়ণগঞ্জে কোন ধর্মকে অপমান করলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ বাধা দিতে জানে। নারায়ণগঞ্জে কোন ধর্ম নিয়ে কোন কটাক্ষ করা চলবে না। এই নারায়ণগঞ্জ লক্ষ্মী নারায়ণ ঠাকুর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে নিজের টাকায় এই নারায়ণগঞ্জ শহরকে কিনে নিয়ে ছিলেন। আজকে অনেকেই জানেন না এই নারায়ণগঞ্জের সৃষ্টি কিভাবে। সবাইকে অনুরোধ রাখবো আমরা কেউ হিন্দু মুসলমান না হয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ মনে করি।

উপস্থিত সকলের কাছে দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য চলে না। অনেকেই জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে এসে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে গেছে। তাই আমাকেও রাজনৈতিক কথা বলতে হয়েছে এ জন্য আমি দু:খিত সকলের কাছে লজ্জিত। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করবো ধর্মীয় কোন স্থানে রাজনৈতিক কোন বক্তব্য নয়। মসজিদে রাজনীতি করা চলে না। মন্দিরে রাজনীতি করা চলে না। স্কুল কলেজে রাজনীতি করা চলে না। কিছু কিছু জায়গা বিশেষ কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেখানে সেই কাজ গুলোই করা উচিত। আগামীতে আমি চাই না কোন রাজনৈতিক কথা বার্তা কোন মসজিদ মন্দিরে না করা হয়। এটাও চাই না আমাদের খুশি করার জন্য কোন মাওলানা, বা কোন মহাশয় ধর্মীয় স্থানে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলুক। মানুষের মাঝেই সৃষ্টিকর্তার বসবাস। মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ। আমাদের একটাই চাওয়া থাকবে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন।

জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এর সভাপতি বাসুদেব চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মিশন এর অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী একনাথা নন্দজী মহারাজ, রাধা গোবিন্দ মন্দিরের প্রধান শ্রী শ্রী হংস মহারাজ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক রাব্বি মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি কমান্ডার গোপি নাথ দাস, মেট্রো গার্মেন্টের কর্নধার অমল পোদ্দার, সাংবাদিক শংকর কুমার দে, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।

add-content

আরও খবর

পঠিত