মেয়র আইভীকে নিয়ে সাবেক কাউন্সিলর মুন্নার কটুক্তি !

নাসিকের উন্নয়ন কাজে বাধাঁ ও কান ধরে উঠবস করিয়ে চালককে মারধরের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা২৪ ( স্টাফ রির্পোটার ) :  মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নাকে নিয়ে কোন ভাবেই বির্তক পিছু ছাড়ছেনা। বিভিন্ন সময়ই নানা ঘটনায় সমালোচিত হয়েছেন সাবেক এই কাউন্সিলর। তারপরেও লাগাম টেনে ধরার যেন কেউই নেই। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রীতিমত বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তিনি। এবার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিয়ে কটুক্তি করা সহ নাসিকের কাজে বাধাাঁ ও চালককে মারধর করার।

ভুক্তভোগী চালক আলী ইসলামের অভিযোগ, শনিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট থেকে পাথর বোঝাই একটি ট্রাক ১৮ নং ওয়ার্ডের ব্রীজ নির্মাণ কাজের জন্য বাপ্পি চত্তর এলাকায় প্রবেশ করে। ওই সময় শ্রমিকলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মুন্না চালককে গাড়ি থেকে নিচে নামতে বলে। তখন এই মাল কার এমন জিজ্ঞাসা করলে চালক জানায় ব্রীজ নির্মাণের জন্য এগুলি কাউন্সিলর কবির সাহেব নিয়ে আসতে বলেছে। এই কথা শোনার পরই ট্রাকের চাক্কার হাওয়া ছেড়ে দেয় শ্রমিক লীগ নেতা মুন্না। পা ধরে মাফ চাইলে চড়, থাপ্পর ও লাথি মারতে শুরু করে।

এরপর এই মাল সিটি করপোরেশনের কাজের জন্য এনেছি, এমনটা বললে তিনি আরো তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে বলেন, তোর কোন বাপ আছে নিয়া আয়। কোন সালার গাড়ি আইতে ক, তোর আইভী . . . . . কে বল পারলে গাড়ি রাখতে। এছাড়াও অনেক অশালীন মন্তব্য করেন যা প্রচার করার মত নয়। চালকের সে অভিযোগের বক্তব্য ভিডিও সহ রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। চালক জানায়, পরে ট্রাক ওইখানে রেখেই পালিয়ে এসে আমি কাউন্সিলর  কবির হোসেন ও সাইটের লোককে জানিয়েছি।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নাসিক ১৮নং ওর্য়াড  কাউন্সিলর  মো. কবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না প্রতিহিংসার জেরে আমার উন্নয়ন কাজের বাধাঁ সৃষ্টি করছে। এটা নতুন কিছু নয়। সে চায় না আমার ১৮নং ওয়ার্ডবাসী নাসিকের সুবিধা ভোগ করুক। উন্নয়ন থামাতে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে সাবেক কাউন্সিলর মুন্না। বিভিন্ন সময়ই নাসিকের কাজে বাধাঁ দিচ্ছে। এরই ধারাবহিকতায় এবার সে আমার ওয়ার্ডের তামাক পট্টি-শহীদ নগর ব্রীজটি নির্মাাণের জন্য বোজাইকৃত পাথরের গাড়িকে আনতে দেয়নি। এছাড়াও চালককে তো মারধড় করেছেই। আমাদের নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিয়েও বাজে মন্তব্য করেছে। আমি এই ব্যপারে মেয়রকে জানিয়েছি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না মুঠোফোনে কোন বক্তব্য দিবে না বলে অস্বিকার করেন। নিউজ করতে হলে অফিসে এসে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিছুক্ষন পরেই প্রতিবেদককে তিনি মুঠোফোনে কল দিয়ে জানায়, কিছুদিন আগেই তিনি (কবির হোসেন) বলেছিলেন ট্রাকের লোড আনলোড সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু এখন কেন কথা বলছেন? কে ট্রাক উঠিয়ে দিলো, কে ট্রাক পাঠিয়ে দিলো, কে কাকে শাস্তি দিলো? এটার ব্যপারে উনি কেন কথা বলেন। কথাটা দুই রকমের হয়ে গেল না? গাড়িটি লোড আনলোড ব্যবহার হয়েছে।

আমি সাবেক কাউন্সিলর, উন্নয়ন আমিও করেছি। আমার চেয়ে এই ওয়ার্ডে বেশী উন্নয়ন কেউ করেনি। সিটি করপোরেশনের কোন গাড়ি গেলে নাগরিক হিসেবে দেখভাল করাটা আমিও দায়িত্ব মনে করি। সেটা সিটি করপোরেশনের গাড়ি ছিলোনা। গাড়িতে নাসিক এর কোন সাইনবোর্ডও ছিলোনা। ট্রাকটি খালি ছিলো। আমি একজন নাগরিক হিসিবে এখানকার মানুষের সমস্যা হতে দিতে পারিনা। মেয়রকে নিয়ে কটুক্তি ও চালককে মারধরের অভিযোগ বিষয়ে পূণরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ করলেতো অনেকভাবেই করা যায়। তারা যেসকল অভিযোগ করেছে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি আমার সাথে।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় একটি কোরবানির পশুর হাটের সিডিউল কেনা নিয়ে নূর হোসেন ও মুন্না সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো। ওই উপজেলা পরিষদে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও এরআগে সরকারী দলীয় কাউন্সিলরদের মধ্যে মল্লযুদ্ধের ঘটনায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছিলো। ওই ঘটনায় শহরের দক্ষিণাঞ্চলে সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না ও ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবুর মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে।  জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় হীরা মহলে শহর এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা করেন এমপি সেলিম ওসমান। ওই সময়ে ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু বলেন যে তিনিও মাঝেমধ্যে ১৮নং ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ দেখভাল করবেন।

কামরুল হাসান মুন্না তখন বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কেন যাবেন। সেখানে তো লোকজন আছে। জবাবে বাবু বলেন, না আমি যাবো সেখানে তো আমার বাড়ি আছে। প্রতিত্তরে মুন্না বলেন, ১৭নং ওয়ার্ডেও তো আমার আত্মীয় স্বজন আছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বাকবিতন্ডা। এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। ওই ঘটনার পর রাতেই শহরে মুন্না ও বাবুর লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টাপাল্টি মহড়া দেয় দুই পক্ষের লোকজন।

তা ছাড়াও নিতাইগঞ্জে ট্রাক লোড আনলোড নিয়ে দুই শ্রমিক নেতা কামরুল হাসান মুন্না ও মাসুদুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে সাংসদ সেলিম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা। তারা টোকেন দেওয়ার নাম করে প্রতি ট্রাক থেকে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। আর এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর চালানো হয় নির্যাতন। তেমনি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে গত ৯ অক্টোবর রাজন ও শহিদ নামে দুই শ্রমিককে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

add-content

আরও খবর

পঠিত