ভবিষ্যৎ হারানোর শঙ্কায় জিসান, কারাবন্দী বিনা অপরাধে

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : মাত্র ২১ বছর বয়সের তরুণ জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান। একাধারে মেধাবী শিক্ষার্থী, ক্ষুদে লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয় এক কর্মী।

মাধ্যমিক জিপিএ-৫ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৪.৪২ পাওয়া এই শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেছিলেন উচ্চশিক্ষা নিয়ে একদিন দেশ ও জাতির জন্য কাজ করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে আগামী ৩১ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

কিন্তু সেই মেধাবী তরুণ এখন রয়েছেন কারাগারে, কোনো প্রমাণিত অপরাধ ছাড়াই।

জিসান নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’-এর প্রতিবেদক এবং প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জ কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। সে প্রথম আলোর কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’তেও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে লেখালেখি করতেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১২ মে দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে জিসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তার পরিবার ও স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি, গ্রেপ্তারের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না জিসান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পায়ে আঘাত পান জিসান, যা থেকে তার লিগামেন্টে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে গ্রেপ্তারের আগে কয়েকদিন ধরে বাড়িতেই ছিলেন জিসান।

আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ভাষ্য, ওইদিন জিসানকে তারা ঘটনাস্থলে দেখেননি। ওই সময় ধারণ করা অসংখ্য ভিডিও ফুটেজেও জিসানের কোনো উপস্থিতি নেই।

এমনকি ঘটনাস্থলে জিসান ছিলেন এমন কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, গ্রেপ্তারের পর দুই দফা আদালতে তোলা হলে, তার জামিন আবেদন দুবারই নামঞ্জুর হয়। ফলে ৩১ মে অনুষ্ঠেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে গভীর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন জিসানের পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

তাদের দাবি, যে তরুণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছে, সে-ই আজ নিজেই অন্যায়ের শিকার। ফ্যাসিবাদ, হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা একজন কর্মী আজ বিনা অপরাধে বন্দি হয়ে শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক সুযোগ হারাতে বসেছে।

পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে অবিলম্বে জিসানের মুক্তি ও জামিনের দাবি উঠেছে।

জিসানের মা জানান, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে জিসান পায়ে গুরুতর আঘাত পান। পরে তার লিগামেন্টে জটিলতা তৈরি হয়, যার কারণে তিনি চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধ ছিলেন এবং গত কিছুদিন যাবত ঘরেই অবস্থান করছিলেন।

তিনি বলেন, আমার ছেলে ভালো স্টুডেন্ট। মেট্রিক আর ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করসে। আমার সেই ছেলে এখন জেলে। কেমনে দিন যায় জানি না। সামনে ওর ভর্তি পরীক্ষা। যেদিন ওকে ধরে নিয়ে যায়, ওইদিন জিসান পাশের রুমে বসে পড়াশোনা করছিল। পুলিশ এসে নাম জিজ্ঞেস করতেই হ্যাঁ বলার পরই ওকে আর ওর বাবাকে নিয়ে যায়।

add-content

আরও খবর

পঠিত