নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সদর প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বিপিএম ও পিপিএম বার বলেন, আপনারা আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিবেন, কে মাদক ব্যবসা করে, কে মাদক খায়, কে সন্ত্রাসী করে, কে মানুষের জায়গা দখল করে, এইসব কাজগুলো আপনারা বলতে পারবেন। আমার দশজন সোর্সের চেয়ে আপনারা ৫০০ লোকের তথ্য অনেক বড়। সুতরাং বিডি ক্লিনের সঙ্গে ক্লিন নারায়ণগঞ্জের পার্টই হবে আমাদের পরিবারকে রক্ষা করা। আমরা শুধু রাস্তা রক্ষা করব না, রাস্তার পরিবেশ রক্ষা করব। আর পরিবেশ রক্ষা করতে চাইলে পরিবারের পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। আজকে একটি ছেলে কোনক্রমে মাদক ব্যবসায়ে জড়িত হচ্ছে, মাদকাসক্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করাটাও পরিবেশের জন্য সহায়ক। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে নগরীর চাষাড়া শহীদ মিনারে বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জের ৩০তম পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
হকারমুক্ত ফুটপাত, চাঁদাবাজা, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত একটি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পুলিশ সুপার বলেছেন, আমরা সবাই মিলে যদি উদ্যোগ নিই তাহলে সুন্দর এবং শান্তিময় একটি শহর হবে এই নারায়ণগঞ্জ। কে কোথা সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করছে সেসব তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোহিতা করুন। আপনারও ক্লিন নারায়ণগঞ্জের একটি অংশ হোন।
বিডি ক্লিনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, আজকে আপনারা স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিয়েছেন এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে। আমি স্বাগত জানাই। আজকে সারাদেশ দূষিত হচ্ছে, ময়লা আবর্জনা থেকেই রোগ জীবাণু প্রসারিত হচ্ছে। আপনারা নিজেরা রাস্তা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। আসলে দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। একার পক্ষে এটা করা সম্ভব না। প্রতিটি জেলায় যদি ২০০/৩০০ লোক কোন একটি জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় কাজ করে তাহলে এক সাথে সারাদেশের সব জেলায় হলে সেটা হবে ব্যাপক।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত নিয়ে এসপি বলেন, আজকে রাস্তার পাশে ফুটপাত, রাস্তার পাশে ময়লা জমে থাকে। যদিও সেটা সিটি করপোরেশনের কাজ। সেটা সিটি করপোরেশনের লোকবল অত্যন্ত কম থাকার কারণে আমরা কিন্তু সেটা পাচ্ছি না। আমরা বলব তারা যেনো এই কাজটি করেন। পাশাপাশি আমরা যারা স্বেচ্ছায় এই কাজটি করি, আমরাও এই কাজটা করব। আপনাদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও প্রয়োজনবোধে কাজ করবে।
পুলিশ সুপার বলেন, আামরা চাই সুন্দর একটি বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশটির স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্বপ্নের সোনার বাংলা আমাদের বিনির্মাণ করতে হবে। এই সোনার বাংলা ইতিমধ্যে হচ্ছে। আজকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিদ্যুতের জন্য আমাদের হাহাকার করতে হয় না। রাস্তা-ঘাট প্রসারিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। মানুষের অভাব অনটন দূর হয়েছে।
পুলিশ সুপারের বক্তব্যের আগে বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ এর উপদেষ্টা ও মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার বিল্লাল হোসেন রবিন বলেন, পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ২৪ জন সদস্য নিয়ে ২০১৬ সালের ৩ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিডি ক্লিন যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ৬৪ জেলায় এ কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে এর সদস্য সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের ১৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জে বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জে কার্যক্রম শুরু করে। আজ শুক্রবার আমরা বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ শাখা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ৩০তম পর্ব শেষ করছি। আজ আমরা চাষাড়া শহীদ মিনার ও তার আশেপাশের এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে আমরা আরোও বড় পরিসরে একটি কর্মসূচি আয়োজন করব।
পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ তার বক্তব্য শেষে বিডি ক্লিনের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এবং নিজেই ঝাড়ু হাতে বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ এর ৩০তম কার্যকম উদ্বোধন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সুভাস চন্দ্র সাহা, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম প্রমূখ। বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক এস এম বিজয়ে সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানের বিডি ক্লিনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নাজির হোসেন প্রধান, মিমরাজ রাহুল, কামরুজ্জামান রানা, আমানুর হামিম, প্রসেনজিৎ রায়, রাব্বি হোসেন, কামরুজ্জামান সাগর, স¤্রাট শাহ জালাল, ইসরাত জাহান মনিকা, সুমাইয়া স্নীগ্ধা, জামান হোসেন হৃদয়, রফিকুল ইসলাম শান্ত, অনিকা মেহজাবীন আমেনা আক্তার মনিকা, আকাশ দাস, মেহেদী হাসান, অপু রায়হান, আসাদুল হক রাকিব, শরীফ ইসলাম সজিব, রূদ্র সাহা ও জয় দত্ত প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৩ জুলাই শহরের চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে (বিডি ক্লিন) নারায়ণগঞ্জ তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে ২০১৬ সালের জুনে বিডি ক্লিন ঢাকা এর কার্যক্রম শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় শহরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক সময় ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে এই কার্যক্রম প্রসারিত করা হবে। মোটকথা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত বিডি ক্লিনএর কার্যক্রম চলবে।