নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জে বারবার টার্গেটে পড়েছেন মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা। দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে শুরু করে উভয় পক্ষের মারামারিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিভৃত করতে গিয়েও হয়েছেন লাঞ্ছনার শিকার। এমনকি আসামী ধরতে গিয়ে তাদের পক্ষের লোকজনের আক্রমনের তোপের মুখে ছেড়ে দিতে হয়েছে আসামীকেও। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশী নিরাপত্তা নিয়েও শংকিত এখন সাধারণ মানুষ।
কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার জায়গায় এখন পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর। ইতিমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ইমামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মসজিদে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশকে মারধরের সময় এক সাংবাদিককে রক্ষা করতে দেখা গেছে।
এছাড়াও গত মাসের ১১ জুন সোনারগাঁয়ে একটি মারামারির মামলায় আসামী ধরতে গিয়ে আসামীর পরিবারের হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন ২ পুলিশ। ওইসময় আসামী আমিনকে সহ ছিনিয়ে নেয় পুলিশের ব্যবহৃত ওয়াকিটকি ওয়ারলেস ও মোবাইল ফোন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আহত পুলিশ কর্মকর্তা মেরাজুল ইসলাম সোহাগের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
এরপর আলোচনায় আসে গত ১০ জুন সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হামলার শিকার হন থানার উপ পরিদর্শক সৈয়দ আজিজুল হক। উত্তেজিত জনতাকে মিছিল করতে না করেছেন এমন তথ্যে তার উপর হামলা চালায় মুসুল্লীরাও। তাকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন সাংবাদিক এবং ওই মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সে ঘটনায় ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরে এ মামলার অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান চালাতে গেলে সেখানেও দস্তাদস্তি হয়। এমনকি আসামীদের ছাড়াতে থানা ঘেরাও করে মিছিলও করে বিক্ষুব্দরা।
আরো জানা গেছে, গত মাসের ১লা জুন নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দুই জন কন্সটেবলকে পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। অবৈধ পণ্য পরিবহনের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এই হামলা চালায় তারা। এই ঘটনায় আহত হয় দুই পুলিশ সদস্য তুহিন ও এমদাদুল হক। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান।
তাছাড়া, গেল বছর সিদ্ধিরগঞ্জে বন্ধ হওয়া মনোয়ার জুট মিলের মেশিনের যন্ত্রাংশ লুটের সময় পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। দেশীয় অস্ত্র ও পেট্রোল বোমাসহ ২ সন্ত্রাসী হান্নান ও জুয়েলকে আটক করা হয়েছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় আট ১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পুলিশকে লক্ষ করে পেট্রোল বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে।
প্রসঙ্গত, গর্বিত ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক জনগণের বন্ধু বাংলাদেশ পুলিশ। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের মোকাবিলা করা বাংলাদেশ পুলিশ। এখন অবধি হাজারো সংকটে সবার আগে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় এখনো এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশষে করোনা সংকটেও জীবনবাজি রেখে দেশের মানুষের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে তা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
তবে পুলিশের উপর বারবার হামলার ঘটনায় সচেতন মহল বলছেন, বর্তমানে পুলিশ অনেকাংশেই সুনাম নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। তারপরেও কিছু কিছু জায়গায় অপেশাদারিত্ব এবং অনাভিজ্ঞতার মূলেই এসব হামলার ঘটনা হচ্ছে। এজন্য পুলিশ জনগনের বন্ধু এটা স্লোগানে থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে বস্তবায়নের অভাব দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অনেক সময় নানা অপরাধের সাথে পুলিশ সদস্যদের জড়িয়ে থাকার কারণে পুলিশের উপর হাত তোলার মত সাহস দেখাতেও পিছ পা হয় না অপরাধীরা।